(উপরে) সভাকক্ষ এবং সভার আমন্ত্রণপত্র (নীচে)। — নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগের বছর নতুন মঞ্চে আবির্ভূত হলেন রাজ্যের বাম মনোভাবাপন্ন শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা, নাট্যপরিচালকেরা। কিন্তু বাম বিদ্বজ্জনেদের নয়া মঞ্চ ছোঁয়া বাঁচাল সেই ‘পরিবর্তন’ শব্দের। যে শব্দ দিয়ে ১৪ বছর আগে সিপিএম বিরোধী স্লোগানকে শাণিত করেছিল তৃণমূল। এবং পরিবর্তন হয়েছিল সরকারের।
রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতী সভাগৃহে মিলিত হয়েছিলেন বামপন্থী বিদ্বজ্জনেরা। কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্রে লেখা ছিল, ‘রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে ভাবতে যে, একটা পরিবর্তনের প্রয়াস জরুরি।’ কিন্তু মঞ্চের পিছনে যে ব্যানার ঝোলানো হয়েছিল তাতে লেখা, ‘প্রকৃত বিকল্পের সন্ধানে’। অর্থাৎ, আমন্ত্রণপত্রে ‘পরিবর্তন’ শব্দটি থাকলেও মঞ্চে তা রইল না। সিপিএম সূত্রে খবর, ‘সচেতন’ ভাবেই তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের আগে ‘পরিবর্তন চাই’ হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছিল রাজ্য। যাতে অসংখ্য বিদ্বজ্জনের মুখ ছিল। পরে তাঁদের কেউ কেউ তৃণমূলে যোগ দিয়ে সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। সেই তালিকায় নাম রয়েছে কবীর সুমন, ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষদের। আবার সেই হোর্ডিংয়ে ছবি থাকা অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনের মতো অনেকে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচক। তাঁরা তৃণমূলের প্রতিও ‘বীতশ্রদ্ধ’।
‘প্রকৃত বিকল্পের সন্ধানে’ রবিবারের আলোচনার নির্যাস— বিজেপি এবং তৃণমূল মিলে রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে তার অবসান ঘটাতে হলে বামেদের নেতৃত্বে বিকল্প কিছু প্রয়োজন। না হলে সাংস্কৃতিক পরিসরে প্রতিবাদের অধিকার, শিল্পচর্চার স্বাধীনতা খর্ব হবে। বাম মনোভাবাপন্ন যে বিদ্বজ্জনেরা রবিবার যাদবপুরে মিলিত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্বঘোষিত সিপিএম। কেউ কেউ ভোটে প্রার্থীও হয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও ছিলেন শ্রোতার আসনে।
পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন সেন, শ্রীলেখা মিত্র, দেবদূত ঘোষ, জয়রাজ ভট্টাচার্য-সহ বাম মনোভাবাপন্ন বিদ্বজ্জনেরা হাজির ছিলেন ইন্দুমতী সভাগৃহে। দেবদূতের বক্তব্য, ‘‘বামেদের নেতৃত্বে বিকল্প তৈরি করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক জগতের মানুষেরা ব্যক্তিগত ভাবে কী কী করতে পারেন, সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।’’ দেবদূত গত লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর আসনে সিপিএমের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন টালিগঞ্জে। দু’বারই হারতে হয় তাঁকে।
অনুষ্ঠান শুরুর সময়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। যেখানে তৃণমূল এবং বিজেপির শাসন ব্যবস্থার ‘নেতিবাচক’ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তার পর একে একে আলোচনা করেন বিদ্বজ্জনেরা। আলোচনাসভার আমন্ত্রণপত্রে ‘পরিবর্তন’ থাকলেও পরে সেই শব্দের পরিবর্তন করা হল। জায়গা পেল ‘বিকল্প’।