ঘরে বাইরে: আইনের চোখে

প্রোমোটার সামলান

অসাধু প্রোমোটারের খপ্পর থেকে বাঁচতে হলে কী করবেন? জানাচ্ছেন নির্মাণ ব্যবসায়ী পঙ্কজ ঘোষ।কারবারি দুই ধরনের— সাধু ও অসাধু। নির্মাণ ব্যবসায়ী বা চেনা নামে ‘প্রোমোটার’ও তার ব্যতিক্রম নয়। অতএব, সাধু সাবধান! ফ্ল্যাট কিনতে যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে, কোথায় থাকতে পারে চোরাবালি। নথিপত্র কী বলছে, বাজার কী বলছে, কী বলছে আইন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩০
Share:

কারবারি দুই ধরনের— সাধু ও অসাধু। নির্মাণ ব্যবসায়ী বা চেনা নামে ‘প্রোমোটার’ও তার ব্যতিক্রম নয়। অতএব, সাধু সাবধান! ফ্ল্যাট কিনতে যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে, কোথায় থাকতে পারে চোরাবালি। নথিপত্র কী বলছে, বাজার কী বলছে, কী বলছে আইন।

Advertisement

নথি খুঁটিয়ে দেখুন

Advertisement

শুধু দক্ষিণের ঘর, মার্বেল ফ্লোর, কিচেন টাইলস, দরজা-জানলার ফিনিশ দেখলে হবে না। আগে খুঁটিয়ে দেখুন, উকিল লাগিয়ে পড়িয়ে নিন নথি।

যদি জমি মালিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ হয়, তবে:

১) জমির দলিল ২) পরচা যাতে জমির শ্রেণি (‌যেমন বাস্তু, ডাঙা, শালি, শিল্প, ডোবা, বাগান ইত্যাদি) চিহ্নিত করা থাকে ৩) মিউটেশন অর্থাৎ জমির মালিকানার দলিল (ভূমি সংস্কার দফতরের দেওয়া দলিলে লেখা থাকবে মালিক কে, কতটা জমি, খাজনা কে দেয়; পুরসভা বা পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের দেওয়া দলিলে লেখা থাকবে, কে কর দেয়— দু’টোই জরুরি) ৪) খাজনার রসিদ ৫) করের রসিদ ৬) পুরসভা বা জেলা পরিষদের ‘অ্যাসেসমেন্ট কপি’ যেখানে জমি মালিকদের সব শরিকের নাম থাকে ৭) জমি মালিক ও প্রোমোটারের মধ্যে হওয়া নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি ৮) সব রকম দলিলে সইসাবুদ করার ক্ষমতা দিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে করা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’, যে ক্ষমতা সাধারণত প্রোমোটার এবং জমি মালিকদের এক জন করে প্রতিনিধিকে দেওয়া হয় ৯) পুরসভা বা জেলা পরিষদ অনুমোদিত নির্মাণের নকশা বা স্যাংশনড প্ল্যান ১০) ফ্ল্যাট বিক্রির চুক্তি ১১) নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরে ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’।

প্রোমোটার যদি নিজে কিনে আবাসন তোলেন, তবে কেবল ৭ ও ৮ নম্বর নথি লাগবে না।

খোঁজখবর করুন

সব নথি যদি ঠিকঠাক থাকে, ওই আবাসনে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কোনও আইনি ঝঞ্ঝাট যে নেই, তা নিশ্চিত। কিন্তু তার পরেও আরও কিছু জিনিস দেখার থাকে:

১) ফ্ল্যাটের দর— খোঁজ নিতে হবে, ওই এলাকায় একই ধরনের ফ্ল্যাটের কী দর চলছে। এই ফ্ল্যাটের দাম যদি তার তুলনায় বেশ কম হয়, তা হলে সাবধান। নির্ঘাত বাজে মালমশলা দিয়ে ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ কাজ হচ্ছে। কবে না মাথার উপরে ভেঙে পড়ে!

২) ফ্ল্যাট বুকিং হয় বিভিন্ন পর্যায়ে। একেবারে গোড়ায় যদি ‘বুক’ না করেন তো খবর নিন, কবে কাজ শুরু হয়েছে, কত দিন লাগছে, কাজের অগ্রগতি কেমন। নইলে পরে ঝুলে যেতে পারেন।

৩) খোঁজ নিন, এই প্রোমোটার আর কোথায় আবাসন গড়েছেন, কেমন গড়েছেন, যাঁরা সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছেন অভিজ্ঞতা কেমন।

৪) পুরসভা বা জেলা পরিষদের সব নিয়ম মেনে নির্মাণ হচ্ছে কি না, খবর নিন। কেননা বেআইনি নির্মাণ হলে তা ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ পাবে না, ফলে আপনার ফ্ল্যাটেরও মিউটেশন আটকে যাবে। বৈধ মালিকানা পাবেন না আপনি।

৫) প্রোমোটারের পিছনে এমন কেউ টাকা লাগিয়েছে কি না, যার টাকার উৎস সন্দেহজনক (‌যেমন হাওয়ালা বা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা) কি না, যা সামনে এলে সব ভেস্তে যেতে পারে।

ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে দেখুন

ফ্ল্যাট বিক্রির চুক্তিতে যে মানের যা যা সামগ্রী (যেমন মার্বল, সুইচ, কল ইত্যাদি) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, তা সত্যিই দেওয়া হয়েছে কি না। যদি তা না হয়, প্রোমোটারকে বলুন সে সব পাল্টে দিতে। যদি তিনি রাজি না হন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২০ ধারায় মামলা রুজু করে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন আপনি। আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে নির্মাণ বা ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ করিয়েও দিতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন