বুধবারের মতো ডিএ মামলার শুনানি শেষ হল। বুধবার মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবীরা। শুনানিতে ডিএ দেওয়া নিয়ে রাজ্যের অনিচ্ছার কথা জানান তাঁরা। আইনজীবীদের সওয়াল, ‘‘এখন ডিএ দেওয়ার কথা বলছেই না রাজ্য। নির্দিষ্ট সময়মতো ডিএ দিতে হয়। এটা সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। কিন্তু বকেয়া ডিএ দিতে চায় না সরকার।’’ কিস্তিতে বকেয়া ডিএ মেটানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আবার শুনানি হবে ডিএ মামলার। সেই দিন, রাজ্য পাল্টা সওয়াল করবে। শুধু তা-ই নয়, মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবীদেরও যদি কিছু বলার থাকে, তা-ও আদালতে জানাতে পারবেন তাঁরা। সোমবার থেকে টানা ডিএ মামলার শুনানি চলছে। বৃহস্পতিবারই শুনানি শেষ হওয়ার কথা। তার পরে শীর্ষ আদালত কী বলে, সেই দিকে তাকিয়ে সরকারি কর্মচারীরা এবং রাজ্য সরকার।
বকেয়া ডিএ কিস্তিতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন পাটোয়ালিয়া। তিনি আদালতে বলেন, ‘‘বকেয়া ডিএ প্রয়োজনে কিস্তিতে দেওয়া হোক। আমরা তাতেও প্রস্তুত।’’
মামলাকারীদের পক্ষের আর এক আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়াও ডিএ বন্ধ নিয়ে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টে। বুধবারের শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘এআইসিপিআই প্রতি মাসে পরিবর্তন হয়। কিন্তু প্রতি মাসে ডিএ পাল্টানো সম্ভব নয়। সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দু’বার ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। আগে রাজ্য সরকারও বছরের দু’বার এমন করত। পরে তারা বছরে এক বার ডিএ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরে এক বছর ছাড়া ছাড়া ডিএ দেওয়া হত সরকারি কর্মচারিদের। তবে এখন ডিএ দেওয়ার কথা বলছেই না রাজ্য।’’
মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী জানান, নয়াদিল্লির বঙ্গভবন এবং চেন্নাইয়ের ইউথ হোস্টেলে কর্মরত এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের ডিএ হিসাব করা হচ্ছে এআইপিসিআই অনুযায়ী। এই নিয়ম মেনেই কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা পান। অথচ পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত অন্য সরকারি কর্মচারীরা সেই হারে ডিএ পাচ্ছেন না। তার পরেই মামলাকারীদের আইনজীবীর ব্যাখ্যা, ‘‘সব কর্মচারীর উপরই রিভাইজ়ড পে অ্যান্ড অ্যালোয়েন্স রুলস, ২০০৯ কার্যকর। তাই কাউকে বেশি ডিএ দেওয়া এবং কাউকে কম ডিএ দেওয়া বৈষম্যমূলক। এই বৈষম্য সমতার অধিকার (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪) লঙ্ঘন করে।’’
ডিএ নিয়ে বৈষম্যের কথা কেন বলছেন? মামলাকারীদের আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র। তাঁর আরও প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দিল্লি, চেন্নাইয়ে কী হারে ডিএ দেওয়া হয়?
বকেয়া ডিএ দিতে চায় না সরকার, সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, রিভাইজ়ড পে অ্যান্ড অ্যালোয়েন্স রুলস, ২০০৯ অনুযায়ী, ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য সরকার ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের বকেয়া ডিএ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ ২০০৬ থেকে ২০০৮ সময়ের ডিএ বাকি থেকে যায় এবং সরকার সেই টাকাটা দিতে চায়নি। গোপাল আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী আগে ১৯৮২ সালকে ভিত্তিবছর ধরে ডিএ-র হিসাব কষা হত। এখন ২০১৬ সালকে ভিত্তিবছর ধরা হয়। গোপালের সওয়াল, ডিএ-র হিসাব করতে হবে এআইসিপিআই অনুযায়ী। এআইসিপিআই হল, একটি সংখ্যা, যা দেখায় কতটা দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। প্রতি মাসে এটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের শ্রম ব্যুরো।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী গোপাল বলেন, ‘‘বেতন কমিশনের সুপারিশ মতো নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দিতে হবে।’’
মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সওয়াল, ‘‘নির্দিষ্ট সময়মতো ডিএ দিতে হয়। এটা সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। ইচ্ছা অনুযায়ী ডিএ দেওয়া যায় না।’’
মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।
বুধবার ফের ডিএ মামলার শুনানি শুরু হল বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে।
বুধবার মামলাকারী, অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের বক্তব্য শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজ্যের তরফে মূলত তিনটি যুক্তি দেওয়া হয়। এক, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। দুই, ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনি অধিকার নেই। এবং তিন, রাজ্য অবস্থা বুঝে সব দিক বিবেচনা করে ডিএ দেয়। রাজ্য কিসের ভিত্তিতে ডিএ দিতে চায়, তা জানতে চান বিচারপতি পিকে মিশ্র। রাজ্যের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে তিনি বলেন, “ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই (কনজ়্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) মেনে না-দিলে কোন অঙ্কে ডিএ দিতে চায় রাজ্য? মঙ্গলবার রাজ্যের বক্তব্য শুনেছে শীর্ষ আদালত।
সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে প্রশ্ন তোলে, কেন সময়ে টাকা দেওয়া হল না। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ তারা কার্যকর করতে চায়, কিন্তু সময় লাগবে। কারণ, ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থ জোগাড় করতে সময় লাগবে।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে রাজ্যকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। ছ’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য টাকা দিতে পারেনি। বরং আদালতের কাছ থেকে আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে সোমবার থেকে প্রতি দিনই শুনানি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে।