বৃহস্পতিবার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউটের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে অভিযোগ জানান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা। উঠে আসে মহেশতলার কথাও। বিজেপি পরিষদীয় দলের দাবি, সব অভিযোগ শুনে রাজ্যপাল তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন । দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠাবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের আচরণের সমালোচনা করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বিধানসভা অচল করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তাই আজ কোনও বিরতি না দিয়ে টানা আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। স্পিকার জানান, বিজেপির দু’টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রথমটি বিচারাধীন বিষয় বলে বিধানসভার রুল অনুযায়ী আলোচনা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় বিষয়টি মেনশন পর্বে উল্লেখ করার সুযোগ দিলেও বিরোধীরা তা নেননি বলে জানান স্পিকার।
বিধানসভায় নিজের কক্ষে তিনি বলেন, “ওরা চিৎকার-চেঁচামেচি, হইহল্লা করে বিভিন্ন রকম প্রসঙ্গ তোলে। ওরা ভেবেছিল বিধানসভাকে অচল করে দেবে। কিন্তু বিধানসভাকে এ ভাবে বন্ধ করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। লোকসভায় তিন জন ওয়েলে নামলে স্পিকার নেমে চলে যান। আমি লোকসভার স্পিকারকেও বলেছি, এটি আপনারা কেন করবেন! আমাদের কাজ আইনসভাকে চালিয়ে যাওয়া। আইনসভাকে বন্ধ করা স্পিকারদের কাজ নয়। আমি প্রত্যাশা করেছিলাম হয়তো ওঁরা নিজেদের আসনে বসবেন। কিন্তু অনেক ক্ষণ চেষ্টা করেও যখন তাঁরা বিধানসভা অচল করতে ব্যর্থ হলেন, তখন তাঁরা চলে গেলেন বাইরে।”
বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের আচরণের জন্য কেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাস। স্পিকার বলেন, “আমি চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিনেই বলেছিলেন, বিধানসভা বিরোধীদের জন্য।” স্পিকারের বক্তব্য, তিনি চান না বিরোধীরা নিজেদের বক্তব্য বিধানসভায় তুলে ধরা থেকে বঞ্চিত হোন। তিনি বলেন, “ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ওঁরা বাইরে বলবে, আমাদের বিধানসভায় কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাই সব কিছু জেনেও আমি ওঁদের সুযোগ দিই। কারণ, আমি চাই বিধানসভার অধিবেশন সুষ্ঠু ভাবে চলুক।”
বিধানসভা থেকে ওয়াক আউটের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে পৌঁছে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী এবং অন্য বিজেপি বিধায়কেরা। অন্যদিকে বিধানসভায় অধিবেশন কক্ষে বিজেপি বিধায়কদের আচরণের নিন্দা জানালেন শোভনদেব চট্টাপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানান তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষও।
অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করার পরে বিধানসভার বাইরে কিছু ক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর পরে মিছিল করে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিজেপির ওয়াক আউট প্রসঙ্গে অধিবেশনে তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “হেরে পালিয়ে গেল বিজেপি।”
বিধানসভার অধিবেশনকক্ষ থেকে ওয়াক আউট (সভাকক্ষ ত্যাগ) করলেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিধানসভা থেকে বেরনোর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ট্রেজ়ারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে ‘চোর চোর’ স্লোগান দিয়ে যান।
পূর্ত দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন স্পিকার। সেই তালিকায় এখন বক্তা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার। তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লাভলী মৈত্র সাদা কাগজে ‘০’ (শূন্য) লিখে বিজেপি বিধায়কদের দেখাচ্ছেন ।
বিক্ষোভ চলাকালীন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলে নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী স্পিকারের চেয়ারের আরও কাছে গিয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করলেন। পরিস্থিতি বুঝে বিজেপি বিধায়কদল এবং স্পিকারের মাঝে মানব প্রাচীর তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছেন বিধানসভার কর্মীরা ।
শ্যামল মণ্ডল, মানস ভুঁইয়া এবং শশী পাঁজাকে দিয়ে পাল্টা আক্রমণাত্মক বক্তৃতা করে বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভের জবাব দেওয়ার কৌশল তৃণমূলের । শাসকদলের একের পর এক মন্ত্রী, বিধায়ক বক্তৃতা করলেও অবিরাম স্লোগান চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা।
বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভের মাঝেই বিধানসভার অন্দরে চলছে অধিবেশন। বিজেপি বিধায়কদের কাগজ ছিঁড়ে প্রতিবাদ করার বিরুদ্ধে সরব হলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিধানসভায় তিনি বলেন, যে কাগজ ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়কেরা। হাতে গেরুয়া পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন তাঁরা। প্রস্তাব খারিজ হওয়ায় স্লোগান এবং চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে থাকেন বিজেপির বিধায়কেরা।
বিজেপি বিধায়কেরা মুর্শিদাবাদের গোলমাল এবং মহেশতলার ঘটনা নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনলেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। তাই দু’টি প্রস্তাবই খারিজ করে দেন স্পিকার। প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও বিধানসভায় হট্টগোলের সম্ভাবনা রয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা ইতিমধ্যে অধিবেশনে যোগ দিতে পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই গলায় গেরুয়া উত্তরীয় পরে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বিধানসভা চত্বরের সামনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, অধিবেশনকক্ষের ভিতরে এবং বাইরে মহেশতলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ হবে। বিজেপি বিধায়কেরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবন যাবেন বলেও জানান তিনি।
বিধানসভার বাদল অধিবেশন বুধবারও হট্টগোল হয়েছে। তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের পুলিশকে ‘হুমকি-ফোন’ কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপি পরিষদীয় দল। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন, এই যুক্তি দিয়ে বিরোধীদের প্রস্তাব খারিজ করে দেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।