মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সময় শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার নিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়াও দশ হাজার অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২টি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭-এ। আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি, ১৪টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়া হয়েছে।’’
পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পেয়েছে ৩৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ পেয়েছে ৪৪ লক্ষ জন, ভারতে সবথেকে বেশি। দশ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরিও পেয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্যে। সংখ্যালঘুদের জন্যও বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ পাচ্ছেন। পুরোটাই দিয়েছে রাজ্য সরকার। ৯৭৪৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও ৪০ হাজার ছেলেমেয়েকে ৩১৬ কোটি টাকা শিক্ষাঋণ দেওয়া হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষক পদে এখনও মোট ৫৬ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫,৭২৬টি পদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আরও ২১ হাজার পদ খালি রয়েছে। আমরা নিয়োগ করতে চাই। কিন্তু আইনের জটিলতায় হচ্ছে না। যাঁরা আইনকে বেলাইন করে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য হচ্ছে। আদালতকে দোষ দেব না। আমাদেরই মধ্যে কিছু কিছু লোক আছে, তাঁদের জন্য এমন হচ্ছে। কত লোকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল। যাঁরা চাকরি করতেন, যাঁরা ‘আনটেন্টেড’, তাঁদের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ভাবছি। তাঁদের কথা ভেবেই বয়সসীমা বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিন্তু আমরা তাঁদের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ফিরতে পারেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘১০ বছর শিক্ষক হিসাবে কাজ করার পরেও যাঁদের আজ অযোগ্য বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তাঁদের নিয়ে আইনত আলোচনা করছি। আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হয়তো তাঁরা আর শিক্ষক হতে পারবেন না, কিন্তু তাঁরা যাতে অন্তত গ্রুপ সি-র চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাঁদের হতাশ হতে বারণ করব। কারণ, আমাদের সরকার মানবিক সরকার। আমরা রাজনীতি দেখে কাজ করি না, মানুষের কথা ভেবে কাজ করি। আজ শিক্ষকদিবসের প্রাক্কালে সব শিক্ষকদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘এককালে ছোট মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বয়স্কদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ রদ করেছিলেন। এই বাংলার অ্যাসেম্বলি থেকেই একদিন সতীদাহ প্রথা রদ বিলও পাশ হয়েছিল। তার পর তা গোটা ভারতে গৃহীত হয়। অর্থাৎ পথ দেখিয়েছিল বাংলাই। এগুলো আমাদের গর্বের জায়গা। আমরা যেন আমাদের অস্তিত্ব ভুলে না যাই।’’
মমতা বলেন, ‘‘আগে স্কুলছুটের হার খুব বেশি ছিল। ছোট মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রী ইত্যাদি নানা প্রকল্পের পর শিক্ষায় স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘সেরা স্কুলগুলির মধ্যে এ বার রামকৃষ্ণ মিশনগুলিই বেশির ভাগ স্থান দখল করে নিয়েছে। বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলিও এগিয়ে এসেছে। যাঁরা সমাজ গড়েন, যাঁরা শিক্ষালয় গড়েন, তাঁদের আমি সম্মান করি।’’
সেরা ১২টি স্কুলকে শিক্ষা ও খেলাধূলায় উৎকর্ষের জন্য পুরস্কার প্রদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ধনধান্যে পৌঁছোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিক্ষারত্ন পেলেন মোট ৭৩ জন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জন স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকা, ২১ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৩ জন ভোকেশনাল এবং অন্যান্য আইআইটি বিষয়ক শিক্ষক। সকলকে পুরস্কৃত করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।মানপত্র, শাল, ঘড়ি, স্মারক, বই এবং ২৫ হাজার টাকা পেলেন প্রত্যেকে। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ধনধান্য অডিটোরিয়ামে। উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । তবে তিনি এখনও এসে পৌঁছোননি।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা-সহ বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সে প্রথম হওয়া ১৯ জন ছাত্রছাত্রীকে সম্মানিত করা হল। সমস্ত বোর্ড মিলিয়ে ৩৮৭জন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের দেওয়া হয়েছে মানপত্র , ট্যাব, ল্যাপটপ, জেমস অফ বেঙ্গল নামে একটি বই, মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা ডায়েরি এবং ১২টি বই।
কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সেরা বিদ্যালয়গুলিকেও সম্মাননা দেওয়া হবে।