পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ওবিসি নিয়ে আদালতের নির্দেশ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘এটা চূড়ান্ত নির্দেশ নয়। কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল আমরা তা হাতে পেয়েছি। সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলাম আমরা। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছি। সিপিএম এবং বিজেপি কখনওই চায় না ওবিসি সংরক্ষণ পাশ হোক। কারণ এটা তো গরিব মানুষের জন্য। যাঁরা সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছেন, এটা তাঁদের জন্য। তাঁদের অধিকার আমরা কী ভাবে কাড়ব?’’
১০০ দিনের কাজ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমরা এই পিটিশন রিভিউ করব। আপনারা বাংলায় দল পাঠাচ্ছেন। আগে তো টাকা দিন। চার বছর হয়ে গেল। একটা পয়সাও দিচ্ছেন না। এটা জনগণের টাকা।’’ তিনি জানান, শ্রমিকদের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার নিজে থেকে দিয়েছে। সেই টাকা তিনি ফেরত চান। মমতার কথায়, ‘‘আদালত অগস্ট থেকে কাজ শুরু করতে বলেছে। কিন্তু চার বছর ধরে কাজ হল না, কোনও টাকা দেওয়া হল না। আমাদের নেতারা দিল্লিতে গিয়ে ধর্না দিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেখাই করলেন না। অনেক অপমান করা হয়েছে আমাদের। টাকা আমরা সরকার থেকে দিয়েছি। আমাদের টাকা আমাদের ফেরত দিতে হবে। যে দিন থেকে এই কাজ বন্ধ হয়েছে, সে দিন থেকে হিসাব করে টাকা দিতে হবে। আমাদের টাকা কেন অন্য রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে? এটা তো অপরাধ।’’
কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘রেল, প্লেন সব তো বিক্রি করে দিয়েছেন। দেশটাকে বেচে দিয়েছেন। মানুষ এর উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার জন্য় ধিক্কার জানাই। সমান্তরাল প্রশাসন তৈরির চেষ্টা করবেন না। রাজ্যের সরকার কিন্তু নির্বাচিত। রাজ্যপাল মনোনীত। অমিত শাহকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি সব কিছু করলে সেটা মেনে নেবেন?’’
মমতা বলেন, ‘‘বিএসএফ থেকে শুরু করে দেশের সেনাবাহিনী, সকলে ‘জয় হিন্দ’ বলে। এতে আমরা কৃতজ্ঞ। ‘জয় হিন্দ’ বাংলা থেকে এসেছে। ‘বন্দেমাতরম’ও বাংলা থেকে। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা সবচেয়ে বড় ছিল।’’
মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয় না। কাজ করিয়ে লোককে পয়সা দেননি। সেই টাকা কে দেবে? সেই টাকা আমরা রাজ্য সরকারের থেকে দিয়েছি। ‘কর্মশ্রী’ করছি নিজেদের টাকা থেকে। এখন তাঁরা ‘বাংলা দিবস’ পালন করতে এসেছেন, বাংলাকে যাঁরা অবজ্ঞা, বঞ্চনা করেন।’’
২০ জুন ‘বাংলা দিবস’ পালন করা হবে বলে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ সচিব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছেন। কে এই তারিখ ঠিক করে দিল, প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘২০ জুন প্রতি রাজ্যের রাজভবনে বাংলা দিবস পালন করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এই তারিখ কী ভাবে ঠিক করা হল? বাংলা ভারতের সঙ্গে থাকবে এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে— এই মর্মে একটা আইন পাশ হয়েছিল ২০ জুন। আর দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৫ অগস্ট। তার দু’মাস পর। বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস আপনারা ঠিক করে দেবেন? বিজেপি ইচ্ছামতো চাপিয়ে দেবে? এটা বাংলাকে চরম অসম্মান বলে মনে করছি। বাংলা দিবস পালন করবে বাংলার সরকার। তা-ও ১ বৈশাখ।’’
জরুরি অবস্থার ৫০ বছর ২০২৪ সালে পেরিয়ে গিয়েছে। ২০২৫ সালে কেন সেই দিবস পালন করা হচ্ছে? প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
নরেন্দ্র মোদীর পরিবর্তে দেশ চালাচ্ছেন অমিত শাহ। এমনটাই অভিযোগ তুললেন মমতা। বললেন, ‘‘মোদী তো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ান। শাহের হাতে সব ছেড়ে দিয়েছেন। ওঁকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেই হয়। বকলমে উনিই তো দেশ চালাচ্ছেন।’’
‘সংবিধান হত্যা দিবস’ নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ওরা ওদের মতো পালন করুক। আমরা এই দিবস পালন করছি না। কারণ, তা হলে আমাদের রোজই এই দিবস পালন করতে হবে। প্রতি দিন এই দিবস পালিত হওয়া উচিত।’’
অহমদাবাদের ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিমান দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। একটা ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা হলে তা নিয়ে ভাবা উচিত। অহমদাবাদের ঘটনার তদন্ত করাচ্ছেন আমলাদের দিয়ে। আমাদের সময়ে এই ধরনের তদন্তের জন্য রেলওয়ে সেফ্টি রিভিউ কমিটি থাকত। তারা তদন্ত করত। বিমানের ক্ষেত্রেও এমন কমিটি থাকার কথা। এখনও একটাও এফআইআর হয়নি! ভেবে দেখেছেন? মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?’’
মমতা বলেন, ‘‘পহেলগাঁও হামলার পর পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানানো হয়েছিল। আমাদের দল থেকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। একটাও উত্তর আসেনি। সন্ত্রাসবিরোধী দিবস একটাও পালন করেছেন আজ পর্যন্ত? এত তো হামলা হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘নোটবন্দির সময়েই গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। কত মানুষকে কত দিন ধরে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে নোট বদলানোর জন্য। কত মানুষ মারা গিয়েছেন! সেই দিনটাকে কেন ‘ব্ল্যাক মানি ডে’ বলে পালন করা হবে না?’’
দেশে কি কোনও সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষ? প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘মিডিয়াকে শিখিয়ে দেওয়া হয় কী করতে হবে, কী না করতে হবে। বিজেপি করলে সাত খুন মাফ! অন্যেরা করলে বন্ধ ঝাঁপ। কারা সংবিধানের সম্মানের কথা বলছে? যারা সংবিধানকে সম্মানই করে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘দেশে তো প্রতি দিন গণতন্ত্র হত্যা করা হচ্ছে। প্রতি দিনই এই দিবস পালিত হওয়া উচিত। সংবিধান রোজ বদলানো হচ্ছে। পরিকল্পিত ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’