— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আগামী ৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আরও বলেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো, সংক্ষিপ্ত সময়ে এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে বাধ্য করা, এমন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা, যা মেশিন পড়তে পারে এমন ফরম্যাটে দেওয়া নেই— এ সব দেখেই বোঝা যায় যে, কোনও দিন যদি ইসি-র হাতে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেওয়া হয়, তা হলে তারা স্বৈরতন্ত্র চালাবে।’’ এর পরেই প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত তাঁকে থামিয়ে বলেন, আপাতত মামলার মধ্যেই সওয়াল সীমাবদ্ধ রাখা হোক। প্রশান্তের পাল্টা প্রশ্ন, কেন ভোটার তালিকা মেশিন-পাঠযোগ্য আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে না? গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘‘১৯৫০ সালে প্রথম নির্বাচন থেকেই স্বচ্ছ ভাবে ভোট পরিচালনা করে এসেছে নির্বাচন কমিশন। এসআইআর-এর মধ্য দিয়ে নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যা আগে কখনও হয়নি। কেন এত তাড়াহুড়ো? কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যেখানে চাপের মুখে ৩০ জন বিএলও-কে আত্মহত্যা করতে হল?’’
আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারও বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এটাই নিশ্চিত করে যে, নিয়ম প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে সংসদের হাতে, নির্বাচন কমিশনের হাতে নয়। ইসি-র কেবল কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তার পর সেই প্রস্তাব জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা সংসদীয় পদ্ধতি মেনে যাচাই করার কথা কেন্দ্রের। বৃন্দা আরও বলেন, ‘‘১৯৬০ সালের নির্বাচক নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় এমনিতেই প্রতিটি মৃত্যু, নাম পরিবর্তন কিংবা ঠিকানা বদলের মতো ঘটনা নথিভুক্ত করার কথা। তা হলে সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতি আনার কী প্রয়োজন?’’
আইনজীবী সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এসআইআর-এর নামে দেশের নাগরিকদের একটি ‘অনুমানিক নাগরিক তালিকা’ তৈরি করে ইসি। এর অর্থ হল, প্রত্যেক নাগরিককে প্রমাণ করতে হবে তিনি সত্যিই ভারতের নাগরিক। এ ভাবে আসলে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে ইসি।’’
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী আইনজীবী সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন করেন, ১৯৬০ সালের নির্বাচক নিবন্ধন বিধির ধারা ২৫ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে এসআইআর পরিচালনার কড়া বিধান রয়েছে? না কি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নিয়মে রদবদল করতে পারে ইসি?
মানুষ স্বভাবগত ভাবেই ‘পরিযায়ী’। মানুষের এই বৈশিষ্ট্যকে এসআইআর-এর ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। শীর্ষ আদালতে এমনটাই সওয়াল করেছেন আইনজীবী সিঙ্ঘভি। তাঁর কথায়, দ্রুত নগরায়ন এবং বাসাবদলকে এসআইআর-এর কারণ হিসাবে দেখাতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।
দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে শুনানি চলছে। সঙ্গে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীও রয়েছেন। রয়েছেন আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি প্রমুখ।
আইনজীবী সিঙ্ঘভির যুক্তি, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২১(৩) ধারার অধীনে যে বিশেষ সংশোধনীগুলি রয়েছে, সেগুলি ক্ষেত্রবিশেষে প্রযোজ্য। দেশের সর্বত্র তা প্রয়োগ করা যায় না। সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘১৯৫০ সালের রোপা আইনে ‘কোনও কোনও নির্বাচনী এলাকা’ শব্দবন্ধটি উল্লেখ করা হয়েছে। সেটিকে ‘সকল নির্বাচনী এলাকা’ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। ফলে আইনের এই ধারা সারা ভারত জুড়ে কিংবা রাজ্যে-রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’’
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী এএম সিঙ্ঘভি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নতুন করে নিয়ম তৈরি করার কোনও ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ‘‘তা হলে পরবর্তী সংশোধনের সময় আবারও নতুন নিয়ম তৈরি করা বা নতুন নথি চাওয়ায় কোনও বাধা থাকবে না নির্বাচন কমিশনের। যেমন জাতিগত পরিচয় কিংবা দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণ চাওয়া।’’