শিল্প চেয়ে মমতাকে চিঠি

লোবায় সই সংগ্রহে নামল কমিটি

সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর রায় এখন রাজ্যের অন্যতম চর্চিত বিষয়। মওকা বুঝে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ফের আসরে নামল লোবার কৃষি জমিরক্ষা কমিটি। ‘শিল্প হোক, শিল্প চাই’— এই প্রস্তাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি গণস্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানোর জন্য থেকে সই সংগ্রহে নামল কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৭
Share:

আটকে রাখা যন্ত্রের সামনে চলছে সই সংগ্রহ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর রায় এখন রাজ্যের অন্যতম চর্চিত বিষয়। মওকা বুঝে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ফের আসরে নামল লোবার কৃষি জমিরক্ষা কমিটি। ‘শিল্প হোক, শিল্প চাই’— এই প্রস্তাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি গণস্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানোর জন্য থেকে সই সংগ্রহে নামল কমিটি।

Advertisement

শুক্রবার অভিযান শুরু হল লোবায় কমিটির আটকে রাখা মাটিকাটার যন্ত্রের সামনে থেকে। কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘দিন কয়েক ধরে প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকার মধ্যে থাকা ১২টি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার কাছ থেকে সই সংগ্রহ করা হবে। তার পরে সেই চিঠি আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠাব।’’ এলাকার তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় ওই কমিটির বর্তমানে কোনও অস্তিত্বই নেই।

বছর আটেক আগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য দুবরাজপুরের লোবা অঞ্চলের নীচে থাকা উন্নতমানের কয়লা তুলে ব্যবহারের অনুমতি পায় ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’ (ডিভিসি)। তারা ‘বেঙ্গল এমটা’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পিপিপি মডেলে সংস্থা গড়ে জমি কিনে কয়লা উত্তোলনের বরাত দেয়। ২০১০-এর শেষভাগ থেকে প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি গড়তে আসা সংস্থার জমি কেনার পদ্ধতিকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা না করেই বিচ্ছিন্ন ভাবে দালালদের মাধ্যমে জমি কিনে খোঁড়াখুড়ি শুরু করেছে সংস্থা, এই অভিযোগ তুলে আন্দোলন দানা বাঁধে। সংস্থার একটি মাটি তোলার যন্ত্র আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। গাড়ি ছাড়াতে ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর লোবায় পুলিশি অভিযান চলে। পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। পাঁচ গ্রামবাসী আহত হন। জখম হন পুলিশ কর্মীরাও। রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল ওই ঘটনা।

Advertisement

যে জমি আন্দোলনকে ঘিরে এত চর্চা, তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কমিটির কাছে। প্রথমত, কমিটির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানে হামলার ঘটনায় জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা ঝুলছিল। দ্বিতীয়ত, ঘটনার পর সংস্থাই কাজে হাত গুটিয়ে নেয়। প্রস্তাবিত খনির জন্য তখন প্রায় ৩২০০ একরের মধ্যে মাত্র ৭০০ একরের মতো জমি কিনেছিল সংস্থা। সংস্থা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় আন্দোলন কার বিরুদ্ধে হবে, এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। একটাই উপায় ছিল, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ে স্থানীয় লোবা পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে কমিটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। সেই চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কমিটি। শাসকদলের কাছে হারার পর থেকে ক্রমশ কমেছে কমিটির কার্যকলাপ। ওই বছর পর্যন্ত যদিও বা কিছু কর্মসূচি ছিল, পরের বছরগুলোতে কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে কমিটি।

ইতিমধ্যে সিলিং বহির্ভূত জমি কেনার জন্য লোবায় এমটার দখলে থাকা জমি কেড়ে নিয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। গত বছর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কেন্দ্রীয় কোল ব্লক বণ্টন অবৈধ ঘোষণা করায় যে সব চুক্তি বাতিল হয়, সেই তালিকায় লোবার প্রস্তাবিত কয়লা খনিপ্রকল্পটিও ছিল। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ফলে আন্দোলন হবে কার বিরুদ্ধে? কেউ তো আর জমি নিচ্ছে না! এলাকার যে সব চাষি জমি বিক্রিও করেছেন, তাঁরাও টাকা ব্যাঙ্কে রেখে দিব্যি চাষ করে যাচ্ছেন।’’

লোবার জমি আন্দোলন অবশ্য কখনও ‘শিল্পবিরোধী’ ছিল না। তা হলে আবার শিল্প চাই হিড়িক তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া কেন? সূত্রের খবর, ফের লোবায় একক ভাবে কয়লা তোলার নতুন বরাত পেয়েছে ডিভিসি। দরপত্র ডাকারও প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থা। খুব শীঘ্রই হয়তো প্রস্তাবিত কয়লাখনির কাজে হাত পড়বে। আবার নতুন করে জমির দর কষাকষি হবে। ‘‘এই সময়টাই নিজেদের ‘শিল্পবিরোধী’ ভাবমূর্তি শোধরানোর পাশাপাশি অস্তিত্ব তুলে ধরার সেরা সময়,’’— আড়ালে বলছেন কমিটির সদস্যেরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন