করোনা-সীমানা
Coronavirus

অভ্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে নয়া চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছি

লকডাউন অবশ্য জীবনের বেশ কিছু বিলাসিতা হরণ করেছে।

Advertisement

স্বর্ণাভ চৌধুরী (বিজ্ঞান গবেষক)

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

গোটা পৃথিবীর গতিটাই এক ধাক্কায় বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। জীবন যেন থমকে আছে কোথাও একটা। বোতাম টেপা না পর্যন্ত হয়তো এ ভাবেই থাকবে। আবার কোনও এক দিন ‘প্লে’ বোতাম টিপলেই সব চলতে শুরু করবে।

Advertisement

সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে চা-জলখাবার খেয়ে বিজ্ঞাপন-সহ খবরের কাগজটা এ-পাতা থেকে ও-পাতা পড়তে পড়তেই স্নানের সময় হয়ে যায়। ব্যোমকেশ বক্সী তো সেই কবেই বলে গিয়েছেন, খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনও অবশ্যই পড়া দরকার। এর পরে কখন, কী ভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে রাতের খাওয়ার সময় হয়ে যায় টেরও পাই না। মূলত বই পড়ে, ইউটিউবে সিনেমা এবং নানা রকম ভিডিয়ো দেখে এবং
মাঝেমধ্যে স্রেফ ‘কিছু না করে’ দিব্যি সময় কেটে যাচ্ছে। বইমেলা থেকে কেনা বইয়ের সদ্ব্যবহার করার জন্য এ রকম অবকাশ দরকার ছিল। বই পড়াটা অবশ্য শুধু অবকাশ যাপন নয়, রীতিমতো মস্তিষ্কেরব্যায়াম। অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিনুর বই আর বাংলার রেনেসাঁস পড়ে তেমনটাই মনে হল। এখন আবার জিম করবেটের সঙ্গে আছি কুমায়ুনের জঙ্গলে।

এ ছাড়া ফেসবুক তো আছেই। সেখানে কত রকমের ছবি, বিভিন্ন ঠেকে কত রকমের মতামত! এ সব দেখেই বেশ সময় কেটে যায়। এমনিতে আমি একা থাকতেই ভালবাসি। সামাজিক মেলামেশার তেমন প্রয়োজন অনুভব করি না। ফলে চা খাওয়া অথবা আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে বেরোনোর দরকার হয় না। আপাতত আমি যে কাজটা করছি সেটা পুরোটাই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলেই আমার কাজ হয়ে যায়। তাই, অন্তত এই মুহূর্তে লকডাউন আমার রোজগারে থাবা বসায়নি।

Advertisement

লকডাউনের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চারপাশের পরিবেশ বেশ শান্তিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। গাড়ির ধোঁয়া আর হর্ন দুটোই বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে। গভীর রাতেও কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে। নেড়ি কুকুরগুলো মাঝরাস্তায় দিব্যি আরাম করে শুয়ে থাকছে। বাড়ির পিছনের অনুষ্ঠান বাড়িটির হইহল্লা থেকে রেহাই পেয়েছি। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস মাইকে বিয়ের মন্ত্র শুনে শুনে কান ঝালাপালাহয়ে গিয়েছিল।

লকডাউন অবশ্য জীবনের বেশ কিছু বিলাসিতা হরণ করেছে। যেমন, বাড়িতে যিনি কাজ করতেন তিনি এখন আসছেন না। সুতরাং সেই কাজগুলি নিজেদের করে নিতে হচ্ছে। আমি এ সব কাজে অভ্যস্ত, তাই বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না। পাঁচ মাস ধরে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার অভ্যেস তৈরি হয়েছিল, এখন সেটা বন্ধ। বাড়ির ছাদে কিছু ব্যায়াম করলেও তা অবশ্যই জিমের মতো হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে বাইরে বেরিয়ে রেস্তরাঁয় ভালমন্দ খেয়ে আসাও বন্ধ। যদিও এগুলি নিতান্ত বিলাসিতা। তবে যখন মনে হয় এই বিলাসিতার উপরেও বহু মানুষের রুটি-রুজি জড়িয়ে আছে, তখন খারাপ লাগে। লকডাউনের বড় সমস্যা হল বেড়াতে যাওয়া বন্ধ। ভবঘুরে জীবনের প্রতি বরাবর আকর্ষণ বোধ করি। যদিও পুরোদস্তুর ভবঘুরে হয়ে ওঠা হয়নি। ইচ্ছে হলে এ দিক-ও দিক চলে যাই। কিন্তু এই সময়ে সে সব ভাবনা বাদ দিতে হয়েছে। লকডাউনের মাস খানেক আগে ঠিক করেছিলাম লখনউ গিয়ে বিরিয়ানি আর কাবাব খেয়ে আসব। সে আর হল না। খবরে যখন দেখলাম, কাতারে কাতারে অভুক্ত মানুষ কয়েক দিন ধ‍রে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন, তখন এ সব ভাবনা নিতান্তই প্রহসন মনে হল। সত্যিই বহু মানুষের কাছে এ বড় কঠিন সময়।

বর্তমান পরিস্থিতি কত দিনে বদলাবে তা বলা মুশকিল। লকডাউন উঠে গেলেও করোনার ছায়া তাড়াতাড়ি দূর হবে কি না, বলা যাচ্ছে না। তবে সংক্রমণ সম্পর্কে যে সচেতনতাটুকু আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা বজায় থাকাই ভাল। সুতরাং অভ্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে নয়া চ্যালেঞ্জের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া উপায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন