নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী
প্রার্থী তালিকায় কিছু চমক দেখাল তৃণমূল। হাল আমলের দুই অভিনেত্রী নুসরত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা তার মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর এ বার লোকসভা ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত এবং গত বার বাঁকুড়ায় জেতা অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে কেন্দ্র বদলে আসানসোলে নিয়ে যাওয়াও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে তাৎপর্যপূর্ণ। এরই সঙ্গে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বাঁকুড়ায় প্রার্থী করার সিদ্ধান্তও নজর কেড়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রেই লড়ে হেরেছিলেন বর্ষীয়ান সুব্রতবাবু।
সব মিলিয়ে ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে এ বার ১৭টি নতুন মুখ। মহিলাও ১৭ জন। এ ছাড়া আর যা হয়েছে, তা খুব একটা অপ্রত্যাশিত বা ছকের বাইরে বলা যায় না। বক্সী ছাড়া আর যে সাত সাংসদ সুগত বসু, সন্ধ্যা রায়, উমা সরেন, ইদ্রিশ আলি, তাপস পাল, তাপস মণ্ডল এবং পার্থপ্রতিম রায় বাদ পড়েছেন, তাঁদের সরানো হতে পারে বলে তৃণমূল অন্দরে কিছু দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। বাদ পড়া প্রার্থীদের দলের কাজে লাগানো হবে বলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ বক্সী কিছুতেই এ বার ভোটে দাঁড়াতে রাজি হচ্ছিলেন না বলে তৃণমূল অন্দরে গুঞ্জন চলছিল। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তা নিয়ে টানাপড়েন চলে। অবশেষে তাঁর ইচ্ছাই মানা হয়। বক্সী দলের কাজেই থাকতে চান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বক্সীদা বলছেন, সকলে লোকসভা কেন্দ্রে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, সংগঠনের কাজ কে করবে? তাই ওঁর জায়গায় মালা রায়কে প্রার্থী করা হল।’’ মালা এখন কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন।
যাদবপুরের সাংসদ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসুর বদলে সেখানে প্রার্থী টলিউডের মিমি চক্রবর্তী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে সাংসদের কাজ চালাতে তাঁর পক্ষে অসুবিধা হচ্ছে বলে নেত্রীকে সুগতবাবু জানিয়েছেন। তবে তাঁর জায়গায় রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ মিমিকে প্রার্থী করা চমকপ্রদ। প্রার্থী বলেন, ‘‘আমি একসঙ্গে অনেক কাজ করি। ফলে সিনেমার পাশাপাশি রাজনীতিও করতে পারব।’’
ভারতীয় সংসদের ইতিহাস নিয়ে এই তথ্যগুলি জানেন?
বাদ পড়া সন্ধ্যা রায়কে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে ‘ভাল’ কাজ করার সার্টিফিকেট দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সন্ধ্যাদি ছোটাছুটি না করে একটু বসে কাজ করতে চাইছেন। ওঁকে সম্মান দিয়ে সেই কাজের ব্যবস্থা করে দেব।’’ মেদিনীপুরে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী দলের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে গত বছর তিনি রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। তাঁর বিধায়ক আসনে জিতেছেন তাঁরই স্ত্রী। এ বার সেই মানসকে লোকসভায় পাঠাতে চান মমতা। গত লোকসভায় ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের দেব-এর কাছে হেরেছিলেন মানস।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় নির্বাচন, দেখে নিন কবে-কোথায় ভোট
ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমার কাজে দলেই বিস্তর ‘অসন্তোষ’ ছিল অনেক দিন ধরে। উমার বদলে স্থানীয় আদিবাসী ও পেশায় শিক্ষিকা বীরবাহা সরেনকে প্রার্থী করেছেন মমতা। উমার বাদ পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উমাও দলের কাজ করতে চায়।’’ আর বসিরহাট কেন্দ্র থেকে ইদ্রিশ আলিকে সরিয়ে বিধানসভায় নিয়ে আসা হবে বলে মমতা জানান। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার হায়দর আজিজ সফির বিধানসভা কেন্দ্র উলুবেড়িয়া পূর্বে প্রার্থী হবেন ইদ্রিশ। তাঁর ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে অভিনেত্রী নুসরত লোকসভায় প্রার্থী। রাজনীতিতে নুসরতেরও এই প্রথম পদার্পণ। রানাঘাট কেন্দ্রে রূপালী বিশ্বাসও রাজনীতিতে আনকোরা। মাসখানেক আগে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে গুলিতে নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী। মমতা জানিয়েছেন, ‘‘এখনও ২৫ বছর বয়স হয়নি রূপালীর। তবে মনোনয়ন পেশের আগেই হয়ে যাবে।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোচবিহার কেন্দ্রে পার্থপ্রতিম রায়কে বাদ দেওয়ার নেপথ্যে অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ যে অন্যতম কারণ, তা স্পষ্ট বুঝিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ওই কেন্দ্রের নতুন প্রার্থী বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীর নাম ঘোষণা করে মমতা বলেন, ‘‘পার্থ টিকিট না পেয়ে যদি দলে থাকে, দলের কাজে লাগাব। টিকিট না পেলে অনেকে অনেক কিছু করে! দলকেও সব বুঝে বাছতে হয়!’’ পার্থ জানান, তিনি তৃণমূলেই থাকবেন। দার্জিলিঙে অমর সিংহ রাইকে তৃণমূলের প্রতীকে প্রার্থী করেও মমতা বার্তা দিয়েছেন। বিনয় তামাংরা পাহাড়ের প্রার্থী চেয়েছিলেন। মমতা তার সঙ্গে যোগ করলেন দলের পতাকা। তাঁর কথায়, ‘‘সমতল ও পাহাড় মিলিয়ে দিলাম।’’ ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসম এবং আন্দামানেও প্রার্থী দিচ্ছে তৃণমূল। সব ক’টি রাজ্যে প্রচারে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।