civic volunteer

ভোটে সিভিক ভলান্টিয়ারে নিষেধাজ্ঞা কমিশনের, থানা চলবে কী করে? প্রশ্ন পুলিশকর্তাদের

সিভিক ভলান্টিয়াররাই এখন পুলিশের ‘প্রাণভোমরা’। তবু ভোটে ব্যবহার করা যাবে না। তা হলে উপায়?

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ১৭:৩০
Share:

এই নির্বাচনে আর এ ভাবে কাজ করবেন না সিভিক ভলান্টিয়াররা। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচনের কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না সিভিক ভলান্টিয়ারদের। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞায় রীতিমতো বিপাকে রাজ্যের পুলিশকর্তারা। কমিশনের নিদান শুনে রাজ্যের অধিকাংশ থানার ওসি-র (অফিসার ইন চার্জ) প্রশ্ন, নির্বাচন চলাকালীন থানা চলবে কী করে?

Advertisement

রাজ্য পুলিশ ডিরেক্টরেটের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে এই মুহূর্তে রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার। জেলা পুলিশের কর্তারা বলেন, সিভিক ভলান্টিয়াররাই এখন পুলিশের ‘প্রাণভোমরা’। সরকারি ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ, গ্রামে গ্রামে নিরাপত্তা দেওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উর্দিধারী পুলিশকে সাহায্য করার পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে মালখানার হিসেব রাখা থেকে শুরু করে, সেরেস্তার কাজ অথবা থানার কম্পিউটার অপারেটরের কাজ— সবেতেই রয়েছেন এই সিভিক ভলান্টিয়াররা।

কিন্তু এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। তাই ওই সিভিক ভলান্টিয়াররা অনেকাংশেই রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত এবং নির্বাচনে তাঁরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন না, এমনটাই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বারে বারে অভিযোগ জানিয়েছে কমিশনে। তার জেরেই নির্বাচনের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে কমিশন।

Advertisement

আরও পড়ুন: এখনই বিজেপিতে নয়, তবে বন্ধ হয়নি কথাবার্তা, বলছেন বৈশাখী

প্রশাসন চালানোর নানা কাজে সাহায্য করার জন্যই নিযুক্ত হন সিভিক ভলান্টিয়াররা।

রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “কমিশন সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার নির্বাচনী কাজে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ট্রাফিক বা থানার অন্য কাজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।”

কর্তাদের এই কথাটাই মানতে নারাজ দক্ষিণবঙ্গের একটি থানার ওসি। তিনি বলেন, ‘‘আমার থানার এলাকা হল প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে রয়েছে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং একটি পুরসভা। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় আমার ভরসা প্রায় সাড়ে তিনশো সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁরাই গ্রামে গ্রামে টহল দেন। তাঁরাই ট্রাফিক সামলান। কারণ আমার থানায় অফিসার থেকে শুরু করে কনস্টেবলের সংখ্যা যা থাকা উচিত তার থেকে অন্তত ৪০ শতাংশ কম আছে। ফলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সাহায্য ছাড়া থানার নিত্যদিনের কাজ চালানো অসম্ভব।”

ওই আধিকারিক ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত যে কাজকর্ম থাকে তা অনেকাংশেই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পূর্ব মেদিনীপুরের একটি থানার আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় বিশেষ নাকা চেকিং থেকে শুরু করেবিভিন্ন ধরনের তল্লাশির কাজ থাকে। কোনও প্রার্থী বা দল আচরণ বিধি ভাঙলে কমিশনের নির্দেশে পুলিশকে অনেক কাজ করতে হয়। সবই আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত কাজ। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ার ব্যবহার না করতে পারলে বড়সড় সমস্যা হবে।”

একই আশঙ্কা উত্তর ২৪ পরগনার এক পুলিশ আধিকারিকের। তিনি বলেন, ‘‘কর্তারাও জানেন, থানার কম্পিউটার অপারেটর হিসেবেও কাজ করেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। মেল চেকও করেন তাঁরাই।” বীরভূমের একটি থানার আধিকারিক বলেন, “আমার থানা এলাকায় রাজনৈতিক গন্ডগোল রোজকার ব্যাপার। এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে তাদের রাস্তা চেনানোর জন্য প্রয়োজনীয় অফিসারও আমার নেই।”

আরও পড়ুন: বাদ ৮ সাংসদ, প্রার্থী তালিকায় রুপোলি ছটা, মিমি-নুসরতকে এনে চমক দিলেন মমতা

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থেকে শুরু করে সেক্টর মোবাইল— সব ক্ষেত্রেই ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। তবে এ বার কমিশনের নিষেধাজ্ঞার পরে সতর্ক থানার আধিকারিকরা। এর আগে হাওড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে।

পুলিশের এই সিভিক ভলান্টিয়ার-নির্ভরতা যে যথেষ্ট সমস্যার তা মেনে নিয়েছেন একাধিক জেলার পুলিশ সুপার। তাঁরা ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত বাহিনীর আবেদন জানাচ্ছেন। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘অতিরিক্ত বাহিনী এলেও এলাকার সঙ্গে তাদের কোনও পরিচিতি না থাকায় সমস্যা থেকেই যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন