শুধু মনোনয়ন দিতে বাঁকুড়ায় সৌমিত্র খাঁ

শুধুমাত্র মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে বাঁকুড়ায় ঢোকার অনুমতি আজ দিল সুপ্রিম কোর্ট

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

আপনি বর্তমানে সাংসদ? আপনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা? অস্ত্র আইনেও মামলা রয়েছে? আপনি দল বদল করেন? আগে কোন দলে ছিলেন? এখন কোন দলে গিয়েছেন?

Advertisement

প্রচারের জন্য বাঁকুড়ায় ঢোকার অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে এসে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়তে হল সৌমিত্র খাঁকে।

শুধুমাত্র মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে বাঁকুড়ায় ঢোকার অনুমতি আজ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু প্রচারের জন্য বাঁকুড়ায় ঢোকার অনুমতি শীর্ষ আদালত থেকে পেলেন না তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, তার জন্য সৌমিত্রকে কলকাতা হাইকোর্টেরই দ্বারস্থ হতে হবে।

Advertisement

গত ২৭ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট সৌমিত্রের আগাম জামিন সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দিয়েছিল, ছ’সপ্তাহ তিনি বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না। বিষ্ণুপুরে ভোট ১২ মে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশের জেরে সৌমিত্র বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের পূর্ব বর্ধমান জেলার অংশে প্রচার করলেও বাঁকুড়া জেলার মধ্যে অবস্থিত ওই লোকসভা কেন্দ্রের সিংহভাগ অংশেই প্রচার করতে পারছেন না। সেই আর্জি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সৌমিত্র।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ প্রথমেই প্রশ্ন তোলে, ‘বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধেই চারটি মামলা? অস্ত্র আইনেও মামলা রয়েছে?’ এর পর প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘‘বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রটি বাঁকুড়া জেলার কতখানি জুড়ে রয়েছে?’’ সৌমিত্রের আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া বলেন, ‘‘সেটা কোনও বিষয় নয়।’’ প্রধান বিচারপতি গগৈ বলেন, ‘‘সেটাই আসল বিষয়। আর্জিতে তা থাকা উচিত ছিল।’’ সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পাটওয়ালিয়া যুক্তি দেন, গত ৯ জানুয়ারি সৌমিত্র দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা করা হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আপনি দল বদলান? আগে কোন দলে ছিলেন? এখন কোন দলে গেলেন?’’ সৌমিত্রর আইনজীবী জানান, তিনি আগে টিএমসি-তে ছিলেন। প্রধান বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘টিএমসি মানে? তামিল মানিলা কংগ্রেস?’’ সৌমিত্রের আইনজীবী জানান, টিএমসি মানে তৃণমূল কংগ্রেস।

পাটওয়ালিয়া আদালতকে জানান, সৌমিত্রের বিরুদ্ধে নদীর চর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার মামলা আগে থেকেই ছিল। ৯ জানুয়ারি সৌমিত্র বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরির আশ্বাস দেওয়ার মিথ্যে মামলা দায়ের হয়। পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ তুলে পাটওয়ালিয়া বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের বিরুদ্ধেও ঠিক একই ভাবে ১৭টি এফআইআর হয়েছিল। কিন্তু সব এফআইআর হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।’’ সৌমিত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলার জবাবে পাটওয়ালিয়ার যুক্তি, পুলিশ সৌমিত্রের বাড়িতে তাঁর অনুপস্থিতিতে তল্লাশি চালিয়েছিল। বাড়িতে সৌমিত্রের বাবা-মাও ছিলেন না। তখনই অস্ত্র উদ্ধার হয় বলে দাবি। তা থেকেই মামলা।’’

রাজ্য সরকার এই মামলায় আগে থেকেই ক্যাভিয়েট ফাইল করে রেখেছিল। যাতে রাজ্যের বক্তব্য না শুনে সুপ্রিম কোর্ট কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়। সৌমিত্রর বিরুদ্ধে মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে দিল্লিতে চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুকোমল কান্তি দাস ও বাঁকুড়া সদর থানার আইসি সঞ্জয় চক্রবর্তী। তবে রাজ্যের আইনজীবীদের কার্যত মুখই খুলতে হয়নি।

প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে এখনই হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নয়। কলকাতা হাইকোর্ট যে শর্ত আরোপ করেছে, তা খারিজ করে দিতেও রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে পাটওয়ালিয়া অনুরোধ জানানোয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, শুধু মাত্র মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সৌমিত্র বাঁকুড়ায় ঢুকতে পারবেন। বিষ্ণুপুরে ১২ মে ভোটগ্রহণ। তার জন্য ১৬ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়। ওই সময়ের মধ্যে যে কোনও একদিন বাঁকুড়ায় ঢুকতে পারবেন সৌমিত্র। রায়ের পরে সৌমিত্র বলেন, ‘‘আমি জেলায় ঢুকতে না পারলেও আমার স্ত্রী ও দলীয় কর্মীরা যে ভাবে প্রচার কাজ চালাচ্ছেন, তাতে আমি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। প্রচারের জন্য যাতে জেলায় ঢুকতে পারি, সে জন্য ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।” তাঁর আইনজীবী কবীরশঙ্কর বসু বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় হাতে পাওয়ার পরে তাঁরা হাইকোর্টে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবেন।

স্বামীর অনুপস্থিতিতে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে ভোট প্রচারে নেমেছেন সৌমিত্রর স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। এ দিন তিনি বলেন, “প্রার্থী জেলায় যে দিন ঢুকবেন, সে দিন বড়সড় চমক দেব বলে আমরা আগেই ভেবে রেখেছিলাম। এ বার কৌশল ঠিক করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন