Lok Sabha Election 2019

‘আমার সঙ্গে চলুন কেউ আটকাবে না’

রবিবার, বিকেল তিনটে। ৩০৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারও সেই মুহূর্তে মিনমিন করছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

যাদবপুরের শহিদনগর স্কুলে ঘেরাওয়ের মুখে বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রাইপুর প্রাইমারি স্কুলের বুথে ঢুকতেই রুখে দাঁড়ালেন জনৈকা ছিপছিপে সালোয়ার কামিজ়ধারিণী। যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট। কড়া স্বরে ফতোয়া দিলেন, বুথে সাংবাদিকেরা ঢুকতে পারবেন না।

Advertisement

রবিবার, বিকেল তিনটে। ৩০৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারও সেই মুহূর্তে মিনমিন করছেন। এবং হাতে নির্বাচন কমিশনের বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা পর্যন্ত বুথে ঢুকতে নিষেধ করছেন। প্রিসাইডিং অফিসারকে কোনও মতে বুঝিয়ে ভোটের খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করা গেল। কিন্তু সিপিএম প্রার্থীর এজেন্টের সঙ্গে কথা বলতে যেতেই ফের ‘রে-রে’ ভঙ্গিতে তেড়ে এলেন সেই ‘বীরাঙ্গনা’! বুথের দরজার মুখে আরও তিন যুবক তখন সঙ্গী আলোকচিত্রীকে ‘ক্যামেরাটা ভাঙলে ভাল হবে’ গোছের বাণী শোনাচ্ছেন। সম্মিলিত চাপের মুখে অগত্যা বুথ থেকে বেরোতে হল।

বুথ থেকে একটু দূরে গাড়িতে ওঠার পরে তিন বাইক আরোহী এসে ‘মানে-মানে কেটে পড়া’র নির্দেশ দিলেন। পাশে স্থানীয় থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী নীরব দর্শক! সকালে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদ স্মৃতি কলোনিতে ঢুকতেই ভোটকেন্দ্র চত্বরে মাঠে ছড়িয়ে বসে বিরাট প্রমীলা-বাহিনী। এখানে বসে কেন? জিজ্ঞেস করতেই তাঁরা হেসে গড়িয়ে পড়েন, ‘‘লাইনে দাঁড়িয়ে পা-টা বড্ড ধরেছে গো!’’ চোখে পড়ল, ভোটের লাইনে সেই মহিলারা যখন ইচ্ছে বুথে ঢুকছেন, বেরোচ্ছেন। একটু বাদে বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা অভিযোগ করলেন, ওই তল্লাটে বুথে কথা কাটাকাটির পরে এক দল মহিলাই তাঁকে ঠেলে বের করে দিয়েছেন। সকালেও মেজাজ শরিফ ছিল অনুপমের। ফোনে কাউকে বলছিলেন, ‘‘ভাল খবর তো!’’ কী ভাল? জানতে চাইতেই বললেন, ‘‘৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কয়েক জনকে আমরা পিসফুলি মেরে বুথ থেকে বার করে দিয়েছি।’’ শহিদ স্মৃতি কলোনি, মুকুন্দপুরের হেলেন কেলার স্কুলে ঘুরে নিতান্তই হতাশ! সেখানে শাসক দলের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্কুলের বাইরে তাঁর গাড়ির পিছুপিছু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের গাড়ি বেরনোর সময়েই অঘটন। একেবারে পিছনে স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি অরিন্দম রায়ের গাড়ি থেমে গিয়েছে। কেন? খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, অরিন্দমবাবুর দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরছে। গাড়িরও কাচ ভেঙে একসা। অরিন্দম বললেন, ‘‘হকি স্টিক চালিয়েছে, ঘুষিও মেরেছে!’’ বিজেপি-র তিন জন এজেন্টও তখন বুথ থেকে বহিষ্কারের অভিযোগ করছেন। পরে অনুপমের দাবি, ‘‘১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৫২টি বুথেই পুনর্নিবাচন চাই!’’ যাদবপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ঘুরে বিক্ষিপ্ত অভিযোগ কানে এলেও সার্বিক ভাবে ভোট নিয়ে বিরোধী দলগুলির কর্মীদের অনেককেই হতাশ মনে হয়নি। যাদবপুরের শক্তিগড়ে সিপিএম-তৃণমূলের পারস্পরিক টক্করের আবহ। শক্তিগড় হাই স্কুলের বুথের সিপিএমের কয়েক জন মহিলা কর্মী অশ্রাব্য গালিগালাজের অভিযোগ করছিলেন, তখন মোটরবাইকটা নিয়ে পাশেই চক্কর কাটছেন জনৈক তৃণমূল কর্মী। সন্ধ্যার পরেও যাদবপুর, পাটুলিতে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের খবর এসেছে। পুলিশ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেই দাবি করছে। বিকেলে রাইপুরের বুথের কাছে দাঁড়িয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষকদের ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। মিমি চক্রবর্তীর এজেন্ট দেবব্রত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘যদি কিছু ঘটে থাকেও সেটা যৎসামান্য! আমার সঙ্গে চলুন, কেউ কোনও বুথে আটকাবে না!’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন