—ফাইল চিত্র।
কয়েক দিন আগে রাজ্যের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষকের বিবেক দুবের সঙ্গে বৈঠকে বিজেপির দাবি মেনে সেখান থেকে সরে যেতে হয়েছিল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবকে। শুক্রবার তাঁর ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি নেতারা। তাঁর ঘরের মেঝেতে বসে পড়েন তাঁরা। যা নজিরবিহীন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
অতীতে বিধাননগর পুরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ঘরের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম নেতারা। কিন্তু সিইও-র ঘরের মেঝেতে বসে পড়ার মতো ঘটনা অতীতে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না পর্যবেক্ষকেরা। বিজেপির এই আচরণের সবিস্তার তথ্য নির্বাচন সদনে পাঠাচ্ছে সিইও দফতর। কমিশনের একাংশের মতে, এ ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ আইনানুগ পদক্ষেপ করতে পারতেন সিইও। তবে তা না-করে সৌজন্য দেখানো হয়েছে।
এ দিন দুপুরে সিইও দফতরে প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন বিজেপি নেতারা। সিইও-র ঘরে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মুকুল রায়, রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন শিশির বাজোরিয়া, শঙ্কুদেব পণ্ডারাও। সেই সময় সিইও-র সঙ্গে তাঁর ঘরে ছিলেন একমাত্র অতিরিক্ত সিইও শৈবাল বর্মন। একটি ভিডিয়ো (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা)-য় দেখা যাচ্ছে, মুকুলবাবু বলছেন, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পর্যাপ্ত বাহিনী না-থাকলে লোকসভা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। সিইও তাঁদের জানান, বিষয়টি কমিশনকে জানানো হচ্ছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মিডিয়া সার্টিফিকেশন এবং মনিটরিং কমিটি (এমসিএমসি)-র মাথায় রয়েছেন অতিরিক্ত সিইও সঞ্জয় বসু। দলীয় গান বা ছবি কিংবা বিজ্ঞাপন ছাড়পত্রের অনুমোদন দেয় এমসিএমসি। সিইও-র দফতরে নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক করেন সঞ্জয়বাবু। এই দু’টি দায়িত্ব থেকেই সঞ্জয়বাবুর অপসারণ দাবি করেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, সাংবাদিক বৈঠক কী বলতে হবে, সঞ্জয়বাবু সেটাও ঠিক করছেন তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ে আগেভাগে জানিয়ে ভোটারদের আত্মবিশ্বাস নামিয়ে দিচ্ছেন ওই অতিরিক্ত সিইও। এই পরিস্থিতিতে সঞ্জয়বাবুর অপসারণের দাবি করে বিজেপি। বিজেপি নেতাদের বলতে শোনা যায়, ‘‘উনি কি আপনাদের কোলের ছেলে!’’ শুক্রবার রাত ১২টার মধ্যে ওই দুই দায়িত্ব থেকে সঞ্জয়বাবুকে না-সরালে শনিবার তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভের হুমকিও দিয়েছেন মুকুলবাবুরা।
সিইও-র দফতরের তরফে বিজেপির অভিযোগের বিবেচনার আশ্বাস দিতে শোনা গিয়েছে ওই ভিডিয়োয়। বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে সঞ্জয়বাবু পরে বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য নয়।’’ বিজেপির দাবি, গত বছর এমসিএমসি-র দায়িত্বে ছিলেন শৈবালবাবু। এ বারেও তাঁকে আনা হোক। বঙ্গ বিজেপির থিম গানের অনুমোদন দেয়নি এমসিএমসি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই রাগ থেকেই সঞ্জয়বাবুর অপসারণ দাবি করছেন বিজেপি নেতারা। এ ভাবে সিইও-র ঘরে ঢুকে হম্বিতম্বি করার কিছু পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। পরে দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুলবাবু বলেন, ‘‘কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকদের তত্ত্বাবধানে ভোট লুট, সন্ত্রাস হয়েছে। তাঁদের না-সরিয়ে অবাধ নির্বাচন যে সম্ভব নয়, সেটা কমিশনকে আগেই জানিয়েছি। তাই আমরা বলছি, রাজ্যের যে-সব জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস হয়েছিল, তাঁদের স্বপদে রেখে লোকসভা ভোট করা যাবে না।’’
এ ভাবে দলীয় নেতৃত্ব যখন ভিতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সেই সময় বাইরে বৃহস্পতিবারের ভোট প্রসঙ্গ তুলে সিইও-কে অপসারণের দাবি জানাতে থাকেন বিজেপি-সমর্থকেরা।