বসন্ত উৎসবের শোভাযাত্রায় মালদহ উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর।ছবি: তথাগত সেনশর্মা, দীপঙ্কর মজুমদার, বিশ্বরূপ বসাক, সুমন বল্লভ
বসন্ত এসে গিয়েছে। লোকসভা ভোটও। তাই দোলের দিনটি নেহাত ছুটির মেজাজে কাটালেন না সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রার্থী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। কেউ চালালেন প্রচার, কেউ বা নানা ধরনের উৎসবে যোগ দিয়ে করলেন জনসংযোগ। বাদ গেল না পারস্পরিক সৌজন্য বিনিময়ও।
দোল ঘিরে বৃহস্পতিবার সৌজন্যের ছবি দেখা গেল শিলিগুড়ির কাছে একটি রিসর্টে। সেখানে আয়োজিত বসন্ত উৎসবে হাজির হন দার্জিলিং লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাই এবং কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকার। পরস্পরকে রং দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তাঁরা। শঙ্কর ও অমর একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরে ছবিও তুলেছেন। হাজির ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। ওই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সমন পাঠক অবশ্য দিনভর পাহাড়ে প্রচার চালিয়েছেন।
সৌজন্যের আর এক ছবি মিলেছে মেদিনীপুর শহরের এক বসন্ত উৎসবে। বিদ্যাসাগর হলের মাঠে এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায়, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৌমেন খান, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস সিংহ, সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য সন্তোষ রানা, বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাস প্রমুখ। একে অন্যের সঙ্গে আবির খেলেন তাঁরা।
সালকিয়ায় উৎসবের মেজাজে রাজ্যের মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল ও হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পডু়ন: প্রথম তালিকায় ২৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভ-বিতর্ক শুরু রাজ্য বিজেপির অন্দরে
আরও পডু়ন: গাঁধীনগর থেকে আডবাণীকে সরিয়ে প্রার্থী অমিত, ‘মার্গদর্শক’ বিদায়ে কটাক্ষ কংগ্রেসের
প্রথম দুই পর্যায়ে ভোট যেখানে সেই জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মণ, আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকেরাও ব্যস্ত ছিলেন প্রচারে। বিজয়চন্দ্র বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে রং খেলে প্রচারের কাজ অনেকটাই হয়েছে।’’ দলের কর্মীদের সঙ্গে এ দিন রং খেলেন বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা।
দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাইকে আবির মাখাচ্ছেন বাম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য।
পুরাতন মালদহের বসন্ত উৎসবের শোভাযাত্রায় যোগ দেন উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর। পরে গৌড় মালদহ কলেজের বসন্ত উৎসবে ছাত্রীদের নাচের সঙ্গে পা মেলান মৌসম। বলেন, ‘‘এই উৎসব প্রাণের উৎসব। তাই এই উৎসবকে জনসংযোগের মাধ্যম করলাম।’’ নদিয়ার চাকদহে বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়ে নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে পা মেলান রাজ্যের ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প প্রতিমন্ত্রী তথা চাকদহের তৃণমূল বিধায়ক রত্না ঘোষও। তিনি বলেন, “এখানে এত ভাল অনুষ্ঠান হচ্ছে, না এলে বুঝতে পারতাম না।”
গল্ফ গার্ডেনে রং খেললেন সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়।
ইসলামপুর শহরের রয়্যাল মাঠে দোল উৎসবে শামিল হন রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল। আবার ওই আসনের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম ইসলামপুরের বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে প্রচার সারেন।
রং খেলছেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সকালে ডোমজুড়ের একটি গ্রামে গিয়ে দোল খেলেন। সেখান থেকে শ্রীরামপুরে এবং শেওড়াফুলিতে রং খেলতে খেলতে পদযাত্রা করেন। কখনও পিচকিরি দিয়ে রং ছিটিয়ে, কখনও বা আবির মাখিয়ে জনসংযোগ করতে দেখা যায় তাঁকে। কল্যাণের প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় মাহেশের লক্ষ্মীঘাটের বাসিন্দা। তিনি পাড়ার প্রভাতফেরিতে শামিল হন। রাস্তার দু’ধারে মানুষের সঙ্গে আবির বিনিময় করেন। তার মাঝেই চলে প্রচার। ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী শামিল হয়েছিলেন নৈহাটির বসন্তোৎসবে। কাঁথির সিপিএম প্রার্থী পরিতোষ পট্টনায়েক চণ্ডীপুরে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দোল খেলেন। আবার দুপুর পর্যন্ত প্রচার এবং ন’টি সভাও করেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বুধবারই বলেছিলেন, ‘‘রং মিলান্তির এই খুশির উৎসবে শামিল হব।’’ এ দিন সকালে তারাপীঠের পূর্বসাগর মোড়ে রঙের উৎসব ঘিরে জনসংযোগে মাতেন তিনি। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালও রং খেলার মধ্য দিয়ে কাটালেন, সঙ্গে সারলেন প্রচারও। তাঁর কথায়, ‘‘রঙের উৎসবের দিন এক দিকে প্রচার, অন্য দিকে মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরে ভাল লাগছে।’’ তবে এ দিন সিউড়ির বাড়িতেই
কাটিয়েছেন বোলপুরের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। দলীয় কর্মীরা তাঁর বাড়িতে এসে আবির মাখান। রামচন্দ্র বলেন, ‘‘দোলের দিনে আলাদা করে কিছু করিনি। ২৩ মার্চ থেকে প্রচারে নামব।’’
ভোটের আসানসোলে এ দিন দুপুরে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থক এবং জনতার সঙ্গে উৎসবে মাতেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (রাতে ঘোষণা হয় তিনিই ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী)। তিনি বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুনদি-কে (সেন) দোলের শুভেচ্ছা জানাই। আজ রাজনৈতিক কথাবার্তা বলতে চাই না।’’ প্রায় একই সুর বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতার গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আজ ভোটের কথা নয়। আনন্দ করার দিন। রঙের উৎসবে সকলকে রঙিন করে দেওয়ার দিন।’’