রাজ্যের আরও ২৫টি আসনের জন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল কংগ্রেস। সেই তালিকায় বিশেষে কোনও চমক নেই। তবে চমক অপেক্ষা করছে পরবর্তী ঘোষণায়! সিপিএম, বিজেপি ঘুরে এ বার কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। এবং কংগ্রেস তাঁকে প্রার্থী করতে পারে তাঁর পুরনো তমলুক কেন্দ্রেই!
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে নাম জড়ানো লক্ষ্মণবাবুকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব ঘিরে কংগ্রেসে বিতর্ক চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের মতো নেতাদের প্রবল আপত্তিতে রাজ্যে তাঁর হাতে কংগ্রেসের পতাকা তুলে দেওয়ার প্রয়াস কয়েক বার স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। দলের মধ্যে বিতর্কের আঁচ পেয়ে এআইসিসি-র কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দিল্লিতে সোমবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিতে অন্যান্য আসনের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার সময়ে এআইসিসি-র তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তমলুকে লক্ষ্ণণবাবুর নামে সিলমোহর পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগদান করানো হবে প্রাক্তন সাংসদকে।
দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকায় প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেসের দুই বিধায়কের নাম আছে। পুরুলিয়া আসনে নেপাল মাহাতো ও বসিরহাটে কাজী আব্দুর রহিম (দিলু)। ওই দু’টি আসন নিয়েই দুই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআইয়ের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল কংগ্রেসের। এ ছাড়া, কৃষ্ণনগরে সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহকে প্রার্থী করা হয়েছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে নতুন মুখ রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি এআইসিসি-র রিসার্চ সেলের সঙ্গে যুক্ত এবং কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের পুত্র। হাওড়ায় শুভ্রা ঘোষ এবং উলুবেড়িয়ায় সোমা রানিশ্রী রায়কে প্রার্থী করা হয়েছে।
প্রার্থী বাছাইয়ের সময় থেকেই কংগ্রেসের অন্দরে বিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছিল। দ্বিতীয় দফার তালিকা ঘোষণার পরে সেই ক্ষোভ ইতিউতি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, কঠিন সময়ে দল যখন একা লড়ছে, তখন যুব এবং সক্রিয় কর্মীদের ভোটের ময়দানে নামিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করা যেত। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না বলে দলের একাংশের অভিযোগ। অল্প দিন আগে বিদেশ থেকে এসে প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল সেলের দায়িত্ব পাওয়া মিতা চক্রবর্তীকে দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী করায় সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই জেলার প্রাক্তন দলীয় সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ। আবার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে নারায়ণ চন্দ্র খাঁকে প্রার্থী করায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত। গত বার লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুরে কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সেই কথা উল্লেখ করে নীলমাধববাবুর বক্তব্য, ‘‘জেলার তরফে প্রার্থী হিসেবে ওঁর নাম পাঠানো হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের জন্য দলের তরফে পাঠানো টাকাও খরচ করেননি উনি। ওঁকে যাতে বিষ্ণুপুরে প্রার্থী না করা হয়, দলের কাছে সেই দাবি তুলব।’’ তবে টাকা খরচ না করার অভিযোগ নস্যাৎ করে নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘দলের নির্দেশই চূড়ান্ত। এটা সবাইকে মানতে হবে।”
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রথমে ১১ ও এখন ২৫ আসনে কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ায় খালি থাকল ৬টি আসন। এর মধ্যে সিপিএমকে ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে যাদবপুর ও বাঁকুড়ায় প্রার্থী দিতে চায় না কংগ্রেস। প্রথমে যে পাঁচটি আসন ছেড়ে রাখার কথা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার, বিষ্ণুপুর ও বোলপুরে প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এর পরেও প্রার্থী ঘোষণা বাকি আসানসোল, তমলুক, ঘাটাল ও উত্তর কলকাতায়।