ছবি: সংগৃহীত।
কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বঙ্গের ভোট পঞ্চমী মোটামুটি শান্তিপূর্ণ— সোমবার সন্ধ্যার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাব। কিন্তু একশো শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি গোলমাল হল কেন? হাসি মুখে উত্তর এড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক শেষ করলেন তিনি। আর দুপুর সিইও দফতর ছাড়ার সময়ে বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক অবশ্য বলে যান, ভোট তো ঠিকই আছে।
অথচ সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় গোলমালের অভিযোগ উঠতে থাকে। কোথাও প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয়দের বচসা-হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি, আবার কোথাও বুথে ঢুকে প্রার্থীর শাসানি। একাধিক জায়গায় সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক জন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ মোট ১২ জন আহত হন বলে জানিয়েছেন সিইও দফতরের কর্তারা। এ দিনের ভোটে মোট পাঁচটি এফআইআর করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির দুই প্রার্থী অর্জুন সিংহ এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়।
অথচ এ দফায় সব ক’টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বলে আগাম জানিয়েছিল কমিশন। জানানো হয়েছিল, প্রতিটি থানা এলাকায় কুইক রেসপন্স টিমের (কিউআরটি) সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিউআরটিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। চতুর্থ দফার তুলনায় প্রায় ৬২ শতাংশ কিউআরটি বাড়ানো হলেও অনেক জায়গায় প্রয়োজনে তাঁদের দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। অনেকে কিউআরটি-কে ‘ডিলেড রেসপন্স টিম’ নাম দিয়ে কটাক্ষ করেছেন! সিইও-র সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘‘কিউআরটি-তে রাজ্য পুলিশও থাকে।’’
সোমবার হাওড়ায় তৃণমূল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে গয়েশপুর, উলুবেড়িয়া এবং বালিটিকুরি থেকে। এ নিয়ে সোমবার রাতে বিএসএফ এবং সিআরপিএফের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আফতাব ও সিদ্ধিনাথ। এ ব্যাপারে দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে সবিস্তার রিপোর্ট পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে। এর আগের দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী শূন্যে গুলি চালিয়েছিল। এ ব্যাপারেও কমিশনকে রিপোর্ট দিয়েছেন বাহিনীর কর্তারা। ‘অতিসক্রিয়তা’র পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু সেই সংক্রান্ত প্রশ্নও কার্যত এড়িয়ে গিয়েছে সিইও দফতর।
সিইও-এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জানিয়েছেন, এ দিন মোট ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন জন গ্রেফতার করা হয়েছে নির্দিষ্ট মামলার কারণে এবং বাকিদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। মোট ১৪টি ঘটনার মধ্যে পাঁচটিতে গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ জমা পড়েছে ২৫৬০টি। অভিযোগের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে হাওড়া। দ্বিতীয় স্থানে হুগলি। আর সব থেকে কম উলুবেড়িয়া। সিপিএমের তরফেই সব চেয়ে অভিযোগ জমা পড়ে বলে সূত্রের খবর। তবে প্রায় ২৪০০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি এ দিন সন্ধ্যার মধ্যেই হয়ে যায়।