ভোট করাবেন ডাক্তারবাবু, তা হলে রোগী দেখবে কে!

গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল অফিসার জর্জ অগাস্টিনকে নির্বাচন কমিশনের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

রোগী দেখছেন চিকিৎসক। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

কয়েক বছর আগে এলাকার একমাত্র হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একমাত্র চিকিৎসক কয়েক ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগে বসেন। এলাকাবাসীর ওইটুকুই সম্বল। এই পরিস্থিতির মধ্যে সেই চিকিৎসককেও ভোটের কাজ দেওয়ার নির্দেশে এলাকায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে গোবরডাঙায়।

Advertisement

গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল অফিসার জর্জ অগাস্টিনকে নির্বাচন কমিশনের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুধু চিকিৎসক নন, হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার ও ৬ কর্মীর নামে ভোটের কাজের চিঠি এসেছে। ইতিমধ্যেই তাঁদের প্রথম দফার প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে। এ দিকে হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল অফিসার, ফার্মাসিস্ট-সহ বাকিদের নামে ভোটের চিঠি আসায় ভোটের সময়ে হাসপাতালের পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতেই হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। ভোটের সময়ে বহির্বিভাগেও পরিষেবা মিলবে না বুঝতে পেরে তাঁরা হতাশ। জর্জকে ভোটের ডিইটি থেকে ছাড় দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে আবেদনও করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রাক্তন সরকারি কর্মী মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যদি ওই চিকিৎসককে ভোটের কাজে তুলে নেয়, আমাদের আর কী করার আছে! তবে কমিশনের উচিত, বিষয়টা ভেবে দেখা।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত চিকিৎসক রোগী দেখেন। মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ পান। অগাস্টিন দু’দিন ভোটের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন। এর ফলে একদিন চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণে অনেককেই ভোটের ডিউটি থেকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ওই চিকিৎসকের বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করে দেখা হবে।’’

গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগটি ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে বন্ধ। অতীতে এখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হত। গোবরডাঙা পুরসভা ও সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ ওই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করতেন। ব্যবহারের না হওয়ায় হাসপাতাল ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। এলাকার মানুষ হাসপাতালটিকে চালু করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের দাবি, নতুন করে সেখানে পরিকাঠামোর তৈরির কোনও বিষয় নেই, সেখানে কেন হাসপাতালটি চালু হবে না।

বহির্বিভাগে রোজ প্রায় চল্লিশ জন মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। দুপুরের পরে অবশ্য হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন গোবরডাঙার মানুষকে ন্যুনতম চিকিৎসা পরিষেবা পেতেও ছুটতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এত দূরে যেতে গিয়ে অনেকেই মারা গিয়েছেন।

হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন গোরবডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ। ওই পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একমাত্র চিকিৎসককে ভোটের ডিউটিতে যেতে হলে তিন দিন পরিষেবা বন্ধ থাকার কথা। সামান্য পরিষেবাটুকু মানুষ পাবেন না, এতে অসুবিধা তো হবেই।’’

২০১৭ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক সভায় গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত হাসপাতালটি চালু করতে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ওখানে হাসপাতাল হবে না।

এতে এলাকার মানুষ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। মিছিল, বন‌্ধ, সভা হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দলীয় নির্দেশে পুরপ্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে তিনি পদ ফিরে পান। এত কিছুর পরেও হাসপাতালটি চালু হয়নি।

কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার হাসপাতালটি বাঁচাতে কোনও পদক্ষেপ করল না। এখন যদি চিকিৎসকও ভোটের ডিউটিতে চলে যান সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন