ভরদুপুরে ভোটের আড্ডায় উঠে এল ভুতুড়ে ভোটার

কফি উইথ ডিইও। ঠিক সময়ে এল ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। ‘‘গরম কফির মজাই আলাদা’’, হালকা চালে রসিকতাও করলেন ডিইও তথা জেলাশাসক পি উলাগানাথন।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৭
Share:

জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিনে বড় বড় করে লেখা—

Advertisement

কফি উইথ ডিইও। ঠিক সময়ে এল ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। ‘‘গরম কফির মজাই আলাদা’’, হালকা চালে রসিকতাও করলেন ডিইও তথা জেলাশাসক পি উলাগানাথন।

সোমবার ভরদুপুরে বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে দিব্যি জমে উঠেছিল ভোটের আড্ডা। জমাটি সেই বৈঠকে বেমক্কা ঢিল ছুড়ে বসল ভূতুড়ে ভোটার! সেই ভূতকে আবার ডেকে আনলেন বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নীপাঞ্জলি রায়। ইংরেজি অনার্সের ওই ছাত্রী মন দিয়ে শুনছিলেন অন্যদের কথা। আচমকা ছুড়ে দিলেন প্রশ্নটা, ‘‘শুনেছি ভূত বলে কিছু হয় না। তা হলে ভোটের সময় ভূতুড়ে ভোট আসে কোথা থেকে?’’

Advertisement

কিছুক্ষণের জন্য রবীন্দ্রসদনে পিন পড়ার স্তব্ধতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে খেই ধরলেন খোদ ডিইও, ‘‘ধরে ধরে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। কথা দিচ্ছি, এ বার আর কোনও ভূতের দৌরাত্ম্য হবে না!’’

ফের হালকা চালে গড়িয়ে চলল আড্ডা। দর্শকের আসনে বসে থাকা পড়ুয়ারা মনে করিয়ে দিলেন ভোটের মুখে হোয়াটসঅ্যাপে ঘোরা সেই ভূতুড়ে ভোটারের গল্পটাও। যেখানে এক প্রৌঢ় ভোট দিতে গিয়ে পোলিং অফিসারের কাছে জানতে চান, ‘‘তোমার বৌদি কি ভোট দিয়ে চলে গিয়েছে?’’ পোলিং অফিসার কাগজপত্র উল্টে বলেন, ‘‘উনি তো অনেকক্ষণ আগেই ভোট দিয়ে চলে গিয়েছেন।’’ প্রৌঢ়ের আফসোস, ‘‘ইশ! এ বারেও দেখা হল না।’’

পোলিং অফিসার কিঞ্চিৎ কুণ্ঠা নিয়েই নিচু গলায় জানতে চান, ‘‘দাদা, কিছু মনে করবেন না। বৌদি কি আলাদা থাকেন?’’ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন প্রৌঢ়, ‘‘আর বলবেন না ভাই! স্ত্রী গত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রতি বারই ভোট দিতে এসে জানতে পারি, সে ভোট দিয়ে চলে গিয়েছে। এ বার দেখা করব বলে তাড়াতাড়ি এসেছিলাম!’’

হোয়াটসঅ্যাপে গল্পটা ঘুরছে ঠিকই। কিন্তু মুর্শিদাবাদে বহু ভোটারই জানেন, এটা গপ্প হলেও সত্যি। শুধু মৃতেরাই নয়, বহু জীবিত ভোটারও বুথে এসে জানতে পারেন, তাঁর ভোটও হয়ে গিয়েছে। নতুন ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে সোমবার বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে বহরমপুর গার্লস কলেজের ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকি আড্ডার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার (ডিইও) তথা জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁরা আড্ডায় বসেছিলেন। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা ডিইওকে নানা প্রশ্ন করছিলেন। প্রশ্ন করা হচ্ছিল দর্শকদেরও। তবে সব প্রশ্নই কিন্তু ছকে বাঁধা ছিল না। এক জন যেমন জানতে চাইলেন, ‘‘স্যর, আপনার হবি কী?’’ স্যর শুধু মুচকি হাসলেন। ঠিক তার পরেই ছিটকে এল আর একটা প্রশ্ন, ‘‘ভোটের মুর্শিদাবাদ স্পর্শকাতর। ভোটকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সকলে আতঙ্কে থাকেন। সেই আতঙ্ক দূর করতে আপনারা কী করছেন?’’

ভূত দূর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভয় দূর করার নিদান দিতে একটু সময় নিলেন ডিইও। তার পরে বললেন, ‘‘যাদের জন্য এই আতঙ্ক তৈরি হয় তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধরাও পড়েছে অনেকে। আশা করি, এ বারে ভোট হবে নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে ও নির্ভয়ে।’’

সত্যিই কি তেমনটা হবে? সে প্রশ্নটা নিয়েই অবশ্য কফির পেয়ালা নামিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ওঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন