প্রতীকী ছবি।
দ্বিতীয় ইনিংসে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকে সোমেন মিত্র ও তাঁর অনুগামীরা বলে আসছেন, দলকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোই তাঁদের লক্ষ্য। বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা বানচাল হয়ে যাওয়ার পরে এখন নিজের জেরে লোকসভায় লড়াই করতে গিয়ে প্রার্থী বাছাই ঘিরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন তাঁরা।
প্রথম দফায় ১১টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে এআইসিসি। পাঁচটি আসন বামেদের প্রতি ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে ছেড়ে রাখার কথা বললেও এখন সেগুলির জন্যও প্রার্থী বেছে রাখছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলের তরুণ প্রজন্মের নেতাদের দাবি, রাহুল গাঁধী বলেছিলেন আসন জয় বড় কথা নয়। দলকে তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। দুর্দিনের বাজারে একা লড়তে হচ্ছে যখন, তা হলে যুব প্রার্থীদের বেশি করে লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হোক। তাতে সংগঠনের আখেরে উপকার হবে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটি যে খসড়া প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে, তার জেরে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে যুব ও ছাত্র নেতৃত্বের উল্টে বিরোধ তৈরি হয়েছে!
দলের বর্ষীয়ান নেতাদের মধ্যে সোমেনবাবু পাঁচ বছর আগে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে হারের পরই নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এ বার লোকসভায় লড়বেন না। দেবপ্রসাদ রায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে এম্স-এ ভর্তি। ওমপ্রকাশ মিশ্র, অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকারের মতো তুলনায় তরুণ নেতারাও প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নন।
এমতাবস্থায় প্রার্থী তালিকায় প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খানের নাম আছে বসিরহাটে দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে। ওই আসনে বাদুড়িয়ার বিধায়ক তথা প্রয়াত নেতা কাজী আব্দুল গফ্ফরের ছেলে কাজী আব্দুর রহিমই (দিলু) প্রথম পছন্দ। উর্দুভাষী সংখ্যালঘু যেখানে নেই, সেখানে শাদাবকে লড়তে পাঠিয়ে লাভ নেই বলেই মনে করছেন যুব নেতারা। আবার বালুরঘাটের ভূমিপুত্র, ছাত্র পরিষদ সভাপতি সৌরভ প্রসাদের নাম রয়েছে বনগাঁ সংরক্ষিত আসনে। বালুরঘাটে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে সদ্য এআইইউডিএফ থেকে আসা সাদিক সরকারের। সৌরভ বনগাঁয় গিয়ে দাঁড়াতে রাজি নন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘কোনও যুক্তি ছাড়া যেখানে সেখানে কাউকে প্রার্থী করে কার কী লাভ!’’
কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রাথমিক তালিকায় উত্তর কলকাতায় নাম রয়েছে কর্পোরেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কর্তার। যাদবপুরে এক মহিলা চিকিৎসক। দক্ষিণ কলকাতায় প্রথম নাম প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের প্রধান, দ্বিতীয় ছাত্র পরিষদের এক প্রাক্তন সভাপতি। কৃষ্ণনগরে সংখ্যালঘু কমিশনের এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান বা এক আইনজীবী, ডায়মন্ড হারবারে এক অচেনা নেতা বা প্রাক্তন এক বিধায়ক। বারাসতে প্রথম নাম মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রীর, ব্যারাকপুরে দ্বিতীয় নাম প্রদেশ কংগ্রেসের এক সহ-সভাপতির। শ্রীরামপুরে আবার যে দু’টি নাম রয়েছে, তাদের বাইরে সন্তোষ পাঠককে প্রস্তাব দিয়েছেন মান্নান। কিন্তু সন্তোষ এখনও নারাজ।
প্রদেশ সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যতটা ভাল প্রার্থী বাছা যায়, সেই চেষ্টাই আমরা করছি। ওঁরা যথাসাধ্য লড়াই দেবেন।’’