ছুটির বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রায় ভিড় উপচে পড়ল নদিয়ার শান্তিপুরের রাস্তায়। নিজেদের মধ্যে যাবতীয় দূরত্ব সরিয়ে রেখে নেত্রীর সঙ্গে নামলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। শহরের বাসিন্দারাই বলছেন, রাসের বিখ্যাত শোভাযাত্রা ছাড়া এমন ভিড় শান্তিপুর আর দেখেনি।
বৈশাখের তপ্ত দুপুর তখন সাড়ে ৩টে পেরিয়ে গড়াচ্ছে বিকেলের দিকে। শান্তিপুর থানার সামনের মাঠে ধুলোর ঝড় তুলে নামল মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। মাঠের চারদিকে এবং রাজপথে তখন শুধুই মানুষের মাথা। অস্থায়ী হেলিপ্যাডে হাজির জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত থেকে শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে, বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যেরা। ছিলেন রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রূপালী বিশ্বাসও।
শান্তিপুরে রাসের শোভাযাত্রা যে পথে যায়, সেই থানার মোড় থেকে শুরু হয়ে বৈষ্ণবপাড়া, শ্যামচাঁদ মোড় পার করে পদযাত্রা যত এগিয়েছে, তত উপচে পড়েছে ভিড়। রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদে তিল ধারণের স্থান নেই। প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তায় বেশ কয়েক বার থামতে হল তৃণমূল নেত্রীকে। মতিগঞ্জ মোড়ের কাছে এক প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্যেরা ছিলেন। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে খোঁজ নিলেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তিপুরের যৌনপল্লির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে দুর্বার মহিলা সমিতির সদস্যেরা ফুল ছুড়ে, শাঁখ বাজিয়ে স্বাগত জানালেন তাঁকে। শ্যামবাজারে একটি পরিবেশ সংগঠনের তরফে ভাগীরথীর উপরে ঝুলন্ত সেতু, ডিজে বক্সের ব্যবহার ও গাছ কাটা বন্ধের দাবি নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা
বলেন সদস্যেরা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক কিশোরীর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্যও আর্জি আসে। ঘণ্টাখানেক পরে বাইগাছি মোড়ে শেষ হয় পদযাত্রা।
তবে এই পদযাত্রার জেরে দু’ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে শহরের মধ্যে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বাসও চলেনি। ফলে অসুবিধায় পড়তে হয় যাত্রীদের। কিন্তু তা নিয়ে আক্ষেপ করার লোক বেশি নেই। হেলিকপ্টারের আনাগোনা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের নেতানেত্রীর আসতে-যেতে দেখেছে শান্তিপুর। কিন্তু এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী টানা এতটা পথ হাঁটলেন। তাঁর সঙ্গে যে দু’জনকে হাঁটতে দেখা গেল, দলের মধ্যে প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত সেই পুরপ্রধান অজয় দে এবং বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে একত্রে দেখাও শান্তিপুরের মানুষের কাছে নতুনই বটে!