দেবলীনাতেই ভরসা বামেদের

সাম্প্রতিক বাম ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে যিনি নজর কেড়েছিলেন, সেই দেবলীনা হেমব্রমকেই ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে প্রার্থী করল সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৯
Share:

ঝাড়গ্রামে দেবলীনা। —নিজস্ব চিত্র

তিন বারের বিধায়ক। ছিলেন মন্ত্রীও। কিন্তু তাঁর যে এমন একটা সহজিয়া ‘ম্যানারিজম’ আছে তা আগে এ ভাবে প্রকাশ্যে এসেছিল কি! সাম্প্রতিক বাম ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে যিনি নজর কেড়েছিলেন, সেই দেবলীনা হেমব্রমকেই ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে প্রার্থী করল সিপিএম।

Advertisement

একটা সময় ছিল যখন জঙ্গলমহল বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সে সব এখন অতীত। ধীরে ধীরে জমি দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল, শাসক দলের সংগঠনে ফাটল দেখা দিচ্ছে। ঝাড়গ্রাম আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে নিয়ে শাসকদলের অন্দরেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিরবাহার স্বামী রবিন টুডু হলেন সাঁওতালদের সর্বভারতীয় সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর নেতা। সামাজিক সংগঠনের নেতার স্ত্রী শাসকদলের প্রার্থী হওয়ায় সামাজিক পদ থেকে রবিনের অপসারণ চেয়ে সরব হয়েছেন আদিবাসী সংগঠনের একাংশ। প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) নেত্রী বিরবাহা হাঁসদা। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি এবং কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে বামেরা ঝাড়গ্রামে প্রার্থী করল দেবলীনাকে।

সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘আমরা জিতব বলেই তো দেবলীনাকে প্রার্থী করেছি। জঙ্গলমহলের মানুষ তৃণমূলের উপর বীতশ্রদ্ধ। বিজেপিকেও মানুষ বিশ্বাস করছেন না। সেই দিক থেকে বামেরাই একমাত্র বিকল্প।’’ দেবলীনা নিজে বলছেন, ‘‘আমি জঙ্গলমহলের ভূমিকন্যা। এই এলাকা আমার হাতের তালুর মতো চেনা। আমি সারা বছর সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি। এখানে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তৃণমূল আর বিজেপি যে কথা বলছে মানুষ আর সে সব বিশ্বাস করেন না।’’ তবে অন্য দলের প্রার্থীদের আক্রমণে নারাজ দেবলীনা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও তাঁরাও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি।’’

Advertisement

তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘সিপিএমের অতীত সন্ত্রাস মানুষ ভুলে যাননি। বিরোধীদের যিনিই প্রার্থী হোন তাতে কিছুই হবে না। আমাদের প্রার্থী বিরবাহা সরেনই জয়ী হবেন।’’ বিজেপি-র আদিবাসী মোর্চার ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি কুনার হেমব্রম বলেন, ‘‘সিপিএম আর তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ। সন্ত্রাস, স্বেচ্ছাচার, স্বজ‌নপোষণ আর লাগামছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ জবাব দেবেন।’’

দেবলীনার বাড়ি বাঁকুড়ার রানিবাঁধে। তিন বার (১৯৯৬, ২০০৬ ও ২০১১) রানিবাঁধের বিধায়ক নির্বাচিত হন দেবলীনা। এর মধ্যে ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলেন আদিবাসী কল্যাণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী। দেবলীনা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। এ ছাড়া দলের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলী এবং সিপিএমের গণ সংগঠন—‘আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য দেবলীনা। গত ফেব্রুয়ারিতে বাম ব্রিগেডের মঞ্চে কানহাইয়া কুমার না-আসায় বাম কর্মীদের অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তখন দেবলীনা ব্রিগেডের সভায় বিশেষ মাত্রা যোগ করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন