যাদবপুরে মিমি চক্রবর্তী। রবিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
টেনশনে ঘুম আসছিল না কিছুতেই! ‘‘তাই ‘ক্যাটালিস্ট’ বলে একটা অন্য রকম বই পড়ছিলাম। না, ফিকশন (গল্প) নয়! জীবন ও পেশায় সফল হওয়ার ফর্মুলা!’’
রবিবার বিকেলে ভোট-উত্তেজনার পারদ থেকে অনেকটা দূরে কালিকাপুরে তৃণমূলের ঠান্ডা-ঠান্ডা পার্টি অফিসে বলছিলেন মিমি চক্রবর্তী।
যাদবপুরে তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বর্ষীয়ান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বা অনুপম হাজরা দিনভর গোটা এলাকা ঘুরছেন! তৃণমূলের তারকা-প্রার্থী নিজের গায়ে কার্যত রোদ লাগতে দেননি। মিমির নিজের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গিয়েছিল জলপাইগুড়িতে। শাসক দলের জবরদস্ত ‘সংগঠনে’র কল্যাণে বাড়ি থেকে বেরোনর তেমন দায়ও ছিল না নায়িকার। তবু মিমি স্রেফ বাড়ি বসে ঘুমোচ্ছিলেন ভাবলে ভুল হবে! ‘‘সকালে দশটাতেও যখন সোনারপুরে ইভিএম বিগড়ে থাকার খবর শুনছি, আমার তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল!’’ সোনারপুরের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগমকে ফোন করে মিমি তাই বলেছেন, যাঁরা লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে তাঁদের জলটল দেওয়া হচ্ছে তো!
লড়াইয়ের ‘সেনাপতি’ অরূপ বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী, বিমান মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গেও দফায় দফায় কথা হয়েছে প্রার্থীর। এই ভোটের আর এক তারকা প্রার্থী, ‘প্রিয় সখী’ নুসরত জহানকেও ফোন করে মিমি খবর নিয়েছেন। বিকেলে বললেন, ‘‘আমি জানতাম বড় অশান্তি হবে না! ভাঙড়েও না! এই মাত্র আরাবুল ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হল।’’
বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর অবশ্য মিমির কানে ঢুকেছে। অনুপমের সঙ্গী বিজেপি নেতার মুখ ফাটার প্রসঙ্গ উঠতে ‘শহিদ স্মৃতি কলোনি’র কথা নিজেই বললেন। ‘‘নাহ, ভায়োলেন্স-মারপিট আমি দেখতে পারি না!’’ তবে কি দলীয় সংগঠনের নিরাপত্তার প্রলেপটুকু নিশ্চিত জেনেই তিনি বাড়ি-বন্দি হয়ে ছিলেন? মিমির জবাব: ‘‘দেখুন, আমি চাইনি আবার ‘নায়িকার সঙ্গে সেলফি (নিজস্বী)’ একটা শিরোনাম হোক। ভোট একটা সিরিয়াস ব্যাপার! ভোটের সময়ে আমায় নিয়ে মাতামাতিতে লোকে ডিসট্র্যাক্টেড (মনঃসংযোগ ঢিলে) হোক সেটাও চাইনি!’’
কিন্তু বুথে তাঁকে দেখে কি ভোটাররা বাড়তি উৎসাহ পেতেন না? নায়িকার মন্তব্য, ‘‘৮-৯বার করে সব ওয়ার্ড ঘুরেছি, খান ৫০ মিটিং! আমি তো সবার কাছে পৌঁছতে চেষ্টার ফাঁক রাখিনি।’’ শাসক দলের যে কর্মীরা তাঁর হয়ে খাটছেন, দিনভর তাঁদের নিয়েই ফোনে মশগুল মিমি। কসবা রথতলায় তাঁর দশতলার ফ্ল্যাট থেকে দু’মিনিটের দুরত্বে কালিকাপুরের তৃণমূল পার্টি-অফিস! বিকেল চারটে নাগাদ সেখানে সাধারণের জন্য দৃশ্যমান হলেন।
ভোটের দিনটা ব্রতও ছিল! রমজানে উপবাসরত ভোটারদের অনুভূতির শরিক হতে এক দিনের রোজা রেখেছেন মিমি। ‘‘সকালে নুসরতের বলে দেওয়া সময় মতো অ্যালার্ম দিয়ে খেজুর, ফলটল খেয়েছি। তার পর জলও না!’’ বাড়ি ফিরে সন্ধ্যা ছ’টা দশ নাগাদ রোজা ভাঙলেন। ভোটের পরে কি টেনশন কমল? হাসলেন মিমি। জানালেন, ফল প্রকাশের আগে চট করে পুরীতে জগন্নাথ-দর্শনটাও সেরে আসবেন।