সালকিয়ার জনসভায় মমতা। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের ৪০ জন বিধায়ক গোপনে যোগাযোগ রাখছেন বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারবলেন, ‘‘যাকে নেওয়ার নিয়ে নাও। আমার একজন গেলে আমি একলক্ষ লিডার তৈরি করি।’’
এই ধরনের মন্তব্য করার জন্য মোদীর প্রার্থী পদ বাতিলেরও দাবি তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী। এ দিন ভদ্রেশ্বরে নির্বাচনী সভায় মমতা বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে থেকে এমন কথা বলা যায় না। আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মিস্টার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।’’এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূলের দাবি, কমিশনের উচিত মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা সোমবারই টুইট করে একে বিজেপির রাজনৈতিক ‘দেউলিয়াপনা’ বলেছিলেন। এ দিন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব মোদীকে‘৭২ বছরের জন্যনিষিদ্ধ’ করা উচিত বলে টুইট করেন।সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও মোদীর সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এমন কথা বলে তিনি বিধিভঙ্গ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, কমিশনের তা দেখা উচিত।’’সব মিলিয়ে বিষয়টি জাতীয় স্তরেবিরোধী ঐক্যের ছবি স্পষ্ট করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সোমবার শ্রীরামপুরের সভায় মোদী ৪০ জন বিধায়কের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।তাঁর দাবি, ২৩ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলে ওই তৃণমূল বিধায়কেরা বিজেপিতে যোগ দেবেন।
এ দিনভদ্রেশ্বরের সভায় মোদীর বক্তব্যকেকটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘নির্লজ্জ প্রধানমন্ত্রী। বেচা-কেনা করছেন। হর্স ট্রেডিং করতে এসেছেন। একজনকে জোগাড় করুন। একজনকে কিনে দেখান। আপনার দলের মতোআমার দল চোর নয়।’’
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়কে মমতা গোড়া থেকেই ‘গদ্দার’ বলে উল্লেখ করে আসছেন। এ দিনকারও নাম না করে মোদীর উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘যে গদ্দারের গলায় হাত বোলাচ্ছেন, সে তো হাওয়ালার মালিক। মামলাও চলছে। অন্য কোনও সরকার হলে এখনই গ্রেফতার করে রেখে দিত। আমি বলে নির্বাচনের সময় কিছু করিনি।’’
তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, ‘‘ঔদ্ধত্য ভাল, অহংকার ভাল। অতি ঔদ্ধত্য ভাল নয়। যে গদ্দারদের গদা দিয়ে বাংলা দেখছেন। ওরাই আপনার আগামী দিনে কালসাপ হবে।’’
বিকেলেসালকিয়ার সভায় ফের এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মমতাবলেন, ‘‘টাকার কাছে যাঁরা বিক্রি হন, তাঁরা মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতক, গদ্দার। আমরা টাকা দিয়ে লোক কিনি না। বাংলার ছেলে মেয়েদের উপর আমার ভরসা আছে।’’
এ দিন রাজ্যের তিন জায়গায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। হুগলির ভদ্রেশ্বরের পরব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আমডাঙা এবং হাওড়ার সালকিয়ায়।প্রতিটি সভা থেকেই প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপিকে একাধিক বিষয়ে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী দাবিকরেন, ‘‘বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশসর্বত্র হারবে বিজেপি। মোদীও এটা বুঝতে পারছেন। জ্যোতিষী ওঁকে বলেছেন বাংলায় চেষ্টা করতে। সে কারণেই বার বার এখানে আসছেন। কিন্তু গোল্লা পাবেন।’’
এ দিনই মেদিনীপুরের সভায় যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২৩ মে-র পর গোটা ভারত মমতাময় হবে। তৃণমূলময় হবে।’’
কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য বিধায়ক নিয়ে মোদীর বক্তব্যের বিরোধিতার পাশাপাশি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে বাংলায়ঘোড়া কেনাবেচার সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে তৃণমূলই।’’
আর মোদীর দাবিকে সমর্থন করে এ দিন দাঁতনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের ১০০ জন বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগকরেছেন। ৪০ জন দিল্লি গিয়েছেন। বাকিরা যাবেন।’’