অভিন্ন অ্যাসিড নীতি কবে, হতাশ ভুক্তভোগীরা

শাহরুখের সংস্থার সৌজন্যে জনা পনেরো অ্যাসিড-দগ্ধ তরুণীর অস্ত্রোপচার চলবে আগামী মাস জুড়ে।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০২
Share:

এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে আলাদা করে অ্যাসিড-হানার বিষয়টির কথা বলা হয়নি।

ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁদের জন্য এখনই কিছু করা যাবে না-বলে জানিয়ে দিয়েছিল কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর। তাই কার্যত ব্যর্থ হয়েই ফেরেন অ্যাসিড-দগ্ধ মনীষা পৈলান, সঞ্চয়িতা যাদব, সুতপা দাস, সুনীতি কর্মকার, পিয়ালি দত্তরা।

Advertisement

এর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই বলিউড-তারকা শাহরুখ খানের সৌজন্যে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। শাহরুখের সংস্থার সৌজন্যে জনা পনেরো অ্যাসিড-দগ্ধ তরুণীর অস্ত্রোপচার চলবে আগামী মাস জুড়ে। গোটা দেশে অ্যাসিড-হানা নিয়ে সক্রিয় একটি সংগঠনের কর্ত্রী তথা দশ বছর আগে নিজে অ্যাসিড-হামলার শিকার সাহিন মালিক বলছিলেন, ‘‘সরকারের তরফে যেখানে এত দিনেও অ্যাসিড-হানা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নীতি চালু হল না, শাহরুখ খানদের এই চেষ্টাটুকু আমাদের জন্য অনেক।’’

এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে আলাদা করে অ্যাসিড-হানার বিষয়টির কথা বলা হয়নি। সাহিনের হতাশা, ‘‘সব দলই মেয়েদের জন্য কত কিছু করার কথা বলে! অ্যাসিড-হামলা এ দেশে নারী বিদ্বেষপ্রসূত একটি বড় অপরাধ। কিন্তু এ বিষয়ে কারও হুঁশ নেই।’’ ২০১৩-য় অ্যাসিড-হামলা উত্তীর্ণা, সমাজকর্মী লক্ষ্মী আগরওয়ালের জনস্বার্থ মামলার জেরে সুপ্রিম কোর্ট সব ক’টি রাজ্যকে নিয়ে অ্যাসিড-নীতি তৈরিতে তৎপর হয়। ২০১৪-য় ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপিও অ্যাসিড-দুর্গতদের চিকিৎসা তথা ক্ষতিপূরণে তহবিল গড়ার কথা বলেছিল। কিন্তু অ্যাসিড দুর্গতদের একটি সর্বভারতীয় সংস্থার কর্তা দিব্যালোক রায়চৌধুরীর ক্ষোভ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অ্যাসিড-দুর্গতদের ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যেই এক লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা। সেটাই আদৌ ক’জন জানেন, সন্দেহ। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত এক জন এই টাকাটা পেয়েছেন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে তিন লক্ষ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বেশ কয়েক জন অ্যাসিড-দগ্ধ ভুক্তভোগী। কিন্তু এই সাহায্যের পরিমাণ নিতান্তই সামান্য বলে তাঁদের অভিমত। অ্যাসিড বিক্রির কারবারে তদারকি চালাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও কার্যত রূপায়ণ হয়নি। ফলে, অ্যাসিড-হামলা ঘটেই চলেছে। দিব্যালোকবাবুর হিসেব, ‘‘জনা ৬০ ভুক্তভোগীর সঙ্গে আমরা কাজ করি, কিন্তু বাস্তবে রাজ্যে ২০০ জনের বেশি অ্যাসিড-দগ্ধ দুর্গত রয়েছেন।’’ শাহিনের দাবি, দেশে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গে অ্যাসিড-হানার শিকার বেশি। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণের ন্যূনতম টাকা পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে কম। তাঁর কথায়, ‘‘হরিয়ানায় তা-ও মাসে ন’হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের। পুনর্বাসনের কিছু চেষ্টা তো জরুরি।’’

এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে কিছু বেসরকারি হোটেল সংস্থার উদ্যোগে অ্যাসিড-দুর্গতদের কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। ২০০৩ সালে অ্যাসিড-হানার শিকার সোনালি মুখোপাধ্যায়কে বোকারো-র ডিসি অফিসে পরে চাকরি দেয় ঝাড়খণ্ড সরকার। সোনালি বলছেন, ‘‘প্রতিবন্ধী কোটাতেও চাকরির সুযোগ এত কম, অ্যাসিড-দুর্গতেরা অনেকেই কিচ্ছু পান না।’’ অখিলেশ যাদব সরকারের আমলে আগরা, লখনউয়ে অ্যাসিড-দুর্গতদের সামনে রেখে কাফেও হয়েছিল। এ রাজ্যে অ্যাসিড-দুর্গতদের পুনর্বাসনের রাস্তা কবে বেরোবে— তাকিয়ে আছেন মনীষা, সঞ্চয়িতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement