দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল মারে

পর্যবেক্ষককে ফোন করে সেলিম আবার ভোটদান কক্ষে ঢুকলে ওই যুবকেরাই ছুটে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। ওদিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সেলিম।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:০৮
Share:

পরিস্থিতি সামলাতে উত্তর দিনাজপুরের রাস্তায় বাহিনী। পিটিআই

কিছু ক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, বুঝি আর কোনও দিন মেয়েদের মুখ দেখতে পাব না। বিশ পঁচিশ জন যুবক মিলে তখন আমাকে মেরে চলেছে। মুখে ঘুসি মারছে, বুকে লাথি মারছে। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যেই বুঝতে পারি, ওদের আঙুলের ফাঁকে ব্লেড লাগানো। একটা করে ঘুসিতে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে চামড়া। মারের চোটে লুটিয়ে পড়ি। কোনও মতে মুখটা বুকের সঙ্গে গুঁজে শুয়েছিলাম। পরে শুনেছি, প্রায় দশ-পনেরো মিনিট ধরে ওরা আমাকে মেরেছে। বিকেলে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে এক্স রে করার পরে জানতে পারলাম, আমার পাঁজরের দু’টো হাড়ে চিড় ধরেছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত বেলা দশটা নাগাদ। আমি পেশাদার সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের খবর সংগ্রহ করতে বেরিয়ে জানতে পারি, ইসলামপুরের পাটগড়া বালিকা বিদ্যালয়ে ছাপ্পা ভোট চলছে। সিপিএমের প্রার্থী মহম্মদ সেলিম সেখানে যান। আমিও যাই। গিয়ে দেখি দু’জন লোক ভোটারদের নিয়ে সোজা ভোটযন্ত্রের কাছেই চলে যাচ্ছেন। কোনও একটি চিহ্নে তাঁদের ভোট দিতে বলছেন সেখানে দাঁড়িয়েই। সেলিম প্রিজ়াইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। আমি মোবাইলে সব ছবিই তুলে নিয়েছিলাম।

তখনই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেলিম বারান্দায় গিয়ে পর্যবেক্ষককে ফোন করেন। আমিও সেখানে ছিলাম। সামনে জনা পঞ্চাশেক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু বেশ কিছু যুবক বুথের কাছেই জটলা করে দাঁড়িয়েছিল। পর্যবেক্ষককে ফোন করে সেলিম আবার ভোটদান কক্ষে ঢুকলে ওই যুবকেরাই ছুটে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। ওদিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সেলিম। তাই তিনি বাইরে বেরোতে পারেননি। সেলিমের গাড়িও তখন ভাঙচুর করা হয়। তাঁর চালক ও সঙ্গীরা তাই দেখে দূরে পালিয়ে যান। আমাকে একা পেয়ে শুরু হয় মারধর। ওই যুবকেরা আমার প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে নেয়। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ভোটের খবর সংগ্রহ করার অনুমতিপত্রটিও কেড়ে নেয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। দু’জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আমাকে বাঁচাতে গা করেননি। উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল অবশ্য কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখবেন বলেছেন।

এলাকার দু’একজনই ছুটে এসে বাঁচান। তত ক্ষণে ভোটাররাও সব ভয়ে চলে গিয়েছিলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে এক জনের ফোন থেকে প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানিকে ফোন করি। সেলিমের মতো তিনিও ঘটনার নিন্দা করেন। বেলা আড়াইটের সময় মোবাইল ফেরতও পাই। কিন্তু তার সব ছবি মুছে দেওয়া হয়েছে। সেলিমের দাবি, ‘‘তৃণমূলের সমর্থকেরা ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিলেন। তাঁরাই সাংবাদিককে মারধর করেছেন।’’ রব্বানি এবং রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের দাবি, তৃণমূল এই কাজ করেনি। যারা মেরেছে, তাদের আমিও চিনি না। তাই ইসলামপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের নামেই অভিযোগ করেছি।

এ দিনই এবিপি আনন্দ-র সাংবাদিক পার্থপ্রতিম ঘোষ একই নির্বাচনী কেন্দ্রের গোয়ালপোখরে আহত হন। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘বুথ দখলের ছবি তুলতে গেলে বাঁশ আর গাছের ডাল দিয়ে আমাকে ও ক্যামেরাম্যানকে মারধর করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন