নদিয়ায় উধাও ভোটের দায়িত্বে থাকা অফিসার

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, কোনও একটি রিপোর্ট ঠিক না হওয়ায় তাঁকে বকাঝকা করেছিলেন জেলাশাসক। তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও শোনা যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

অর্ণব রায়। নিজস্ব চিত্র

ভোটের মাত্র দিন দশেক আগে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন নদিয়ায় ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেষ তাঁকে দেখা গিয়েছিল কৃষ্ণনগরে জেলা প্রশাসনিক ভবনে। স্ত্রীর সঙ্গেও শেষ কথা হয় ওই দুপুরেই। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, কোনও একটি রিপোর্ট ঠিক না হওয়ায় তাঁকে বকাঝকা করেছিলেন জেলাশাসক। তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও শোনা যায়। তাতেই অর্ণব রায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। যদিও নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত তা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, গত তিন-চার দিনের মধ্যে অর্ণবের সঙ্গে তাঁর কোনও কথাই হয়নি। তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানোও হয়নি। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েকের মতে, ‘‘ব্যক্তিগত কোনও বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। হয়তো কোনও অবসাদ রয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।’’

আগামী ২৯ জুলাই নদিয়ার দুই লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটে ভোট। আজ, শনিবার তৃণমূলের হয়ে প্রচারে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনের সপ্তাহে আসছেন বিজেপির অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী। প্রস্তুতি তুঙ্গে। তার মধ্যে এ রকম একটি ঘটনায় চাপে পড়ে গিয়েছে জেলার পুলিশ-প্রশাসন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে কৃষ্ণনগর কোতয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন অর্ণবের স্ত্রী অনীশা যশ। তিনি নিজেও ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে বর্তমানে ‘প্রবেশন’-এ আছেন। বছর বত্রিশের অর্ণব এমনিতে জেলার একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নোডাল অফিসার। বছর দুই হল তাঁদের বিয়ে হয়েছে।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ অর্ণবকে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। কখন তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন, কেউ খেয়াল করেনি। অনীশা পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ তাঁদের শেষ কথা হয়েছিল। খুব ব্যস্ত আছেন জানিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, দুপুর ২টো নাগাদ শেষ বার শান্তিপুর স্টেশন এলাকায় তাঁর মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে ফোন বন্ধই আছে। শান্তিপুর থেকে ভাগীরথী পেরিয়ে অর্ণবের পূর্ব বর্ধমান জেলায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অর্ণবের বাড়ি আসানসোলের রবীন্দ্রনগর এলাকায়। তাঁর উধাও হয়ে যাওয়ার খবর শুনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁর বাবা হারাধন রায় ও মা সুলেখা। তাঁরা জানান, দিন সাতেক আগে শেষ বার কথা হয়েছিল। তখন তাঁদের এক বারও মনে হয়নি অর্ণব চাপে আছেন। হারাধন বলেন, ‘‘আমি চাই, নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসন দ্রুত আমার ছেলের সন্ধান করুক।’’

নদিয়া জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের দাবি, আগেও একাধিক বার আত্মগোপন করার ঘটনা ঘটিয়েছেন অর্ণব। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না-হওয়ায় তিনি গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। বীরভূমে নলহাটি ব্লকে জয়েন্ট বিডিও থাকার সময়েও এক বার উধাও হন। দু’বারই দিন দুয়েকের মধ্যে ফিরে এসেছেন। নদিয়া জেলাশাসক বলেন, “আমাদের কাছে কিছু তথ্য এসেছে। আশা করছি, অর্ণব খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ শরীরে ফিরে আসবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন