রবিবার সকাল। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে কয়েক জন রোগিণী তাঁদের খাবার জলের বোতল থেকে খানিকটা করে জল ঢেলে দিচ্ছিলেন সবুজ রঙের প্লাস্টিকের গামলায়।
‘‘ব্যাপার কী, মাসিমা?’’
প্রশ্ন শুনেই আশপাশের বেডে থেকে লক্ষ্মী বারুই, সুমিতা সাহারা হইহই করে উঠলেন— “সকাল থেকে হাসপাতালে জল নেই। ধোয়া-মোছা সব বন্ধ। তাই সবাই মিলে খানিকটা করে জল দিচ্ছি যাতে নোংরা মেঝেটা একটু মোছা যায়।” কয়েক জন আয়া মাসি সেই গামলার সামান্য জলটুকু দিয়েই মেঝে মুছতে লাগলেন।
কেন এই দুরবস্থা? গোটা নবদ্বীপ হাসপাতালে জল সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। হাসপাতালে তাদের কর্মী এক জনই। ধনঞ্জয় ঘোষ নামে ওই কর্মী সকালেই কল্যাণীতে চলে গিয়েছেন ভোটের প্রশিক্ষণ নিতে। তালাবন্ধ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পাম্পঘর। তার জেরে ভোর থেকে নির্জলা হাসপাতাল। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে জলের সমস্যা জানিয়ে একের পর এক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে ওয়ার্ডমাস্টারের টেবিলে।
সকাল থেকেই একে একে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড, সংক্রমক বিভাগ, এমনকি জরুরি বিভাগও জলশূন্য হয়ে পড়ে। জল চলে যায় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের আবাসন এবং হস্টেলেও। জল না থাকায় হাসপাতালে সাপ্তাহান্তিক ধোয়াধুয়ি করা যায়নি। ঝাঁট দিয়েই ক্ষান্ত হতে হয়েছে সাফাইকর্মীদের। বেলা বাড়তে বাইরে থেকে জল আনতে দেখা গিয়েছে রোগীর পরিজনদের। তা-ও রক্ষে, রবিবার বলে আউটডোর বন্ধ ছিল। না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়ত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যিনি পাম্প চালানোর দায়িত্বে, সেই ধনঞ্জয় ঘোষের দাবি, “দু’দিন ধরে হাসপাতাল সুপারকে জানানোর চেষ্টা করে গিয়েছি। কিন্তু তিনি আদৌ গুরুত্ব দেননি। বিকল্প ব্যবস্থাও করেননি।” যদিও নবদ্বীপ হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালির পাল্টা দাবি, “উনি কিছুই জানাননি। শুধু এ বার নয়, আগেও এমন কাণ্ড করেছেন। যেহেতু উনি আমাদের কর্মী নন, আমরা কোনও ভাবেই ওঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উনি নিজের মর্জি মতো কাজ করেন। আমরা বিষয়টি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে জানিয়েছি।”
নবদ্বীপ ব্লক ও সংলগ্ন পূর্ব বর্ধমান জেলার বিরাট অংশের এক মাত্র ভরসা এই হাসপাতালে ১২৫টি শয্যা থাকলেও প্রায় সব সময়েই অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এ দিন সকালে মহিলা বিভাগে ১১১ জন, পুরুষ বিভাগে ৪৯ জন এবং সংক্রামক বিভাগে ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। ছিল বেশ কয়েকটি নবজাতক
শিশুও। একটি পাঁচ হর্স পাওয়ার পাম্প দিয়ে দিনে চারবার জল তুলে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা হয়। এ দিন সকাল থেকে এক বারও পাম্প চলেনি।
হাসপাতাল সুপারের দাবি, “পাম্প না চললেও হাসপাতাল জলশূন্য হওয়ার কথা নয়। কেননা দমকলের জন্য পঞ্চাশ হাজার লিটার জল সব সময় মজুত থাকে।” যদিও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, রোগীর পরিজনদের জলের জন্য ছোটাছুটি দেখে সেই বিকল্প ব্যবস্থা আছে বলে মালুম হয়নি।
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ইস্টার্ন মেক্যানিক্যাল সাব-ডিভিশন ২-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ সাহা বলেন, ‘‘কেন এ রকম ঘটল তা নিয়ে ওই কর্মীর সঙ্গে কথা বলব। তবে ভোটের প্রশিক্ষণ থাকলে তো যেতেই হবে!’’ নদিয়া জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘নবদ্বীপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানালে অন্য দিন ওই কর্মীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত। কেন হাসপাতাল তা জানায়নি, খোঁজ নিচ্ছি।’’