পুলিশের সঙ্গে বচসা। নিজস্ব চিত্র।
গণনাকেন্দ্রের বাইরে ক্যাম্প অফিস করা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে প্রকাশ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বেশ কয়েক মিনিট ধরে তিনি পুলিশ সুপারকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে তিনি বেআইনি কিছু করেননি। কিন্তু পুলিশ সুপার তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থেকে জানিয়ে দেন যে ওই জায়গায় কোনও রাজনৈতিক দলের ক্যাম্প অফিস করতে দেবেন না।
মেজাজ হারিয়ে মন্ত্রী রীতিমতো হুমকি দেন পুলিশ সুপারকে যে ভোট মিটে যাওয়ার পর কী হবে? মন্ত্রীর হুমকি শুনেও অবশ্য সিদ্ধান্ত বদল করেননি পুলিশ সুপার। উল্টে পুলিশ সুপার অমিত কুমার সিংহ পাল্টা মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন যে তিনি গোটা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
বুধবার ঘটনার সূত্রপাত দুপুরে। কোচবিহারের গুঞ্জবাড়ি পলিটেকনিক কলেজের গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে যান পুলিশ সুপার। সেখানেই তাঁর চোখে পড়ে গণনাকেন্দ্রের কিছু দূরে একটি বাড়ির সামনে ত্রিপল এবং কাপড় দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী কাঠামো। তিনি অধস্তন আধিকারিকদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই কাঠামোটি তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিস। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন, ওই কাঠামো ভেঙে ফেলতে হবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের মাধ্যমে খবর যায় রবীন্দ্রনাথবাবুর কাছে। তিনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন।
আরও পড়ুন: বারণ করেছিলাম, তবু কেন ভোট দিলেন? বেলেঘাটায় রাস্তা আটকে শাসানি, দেখুন ভিডিয়ো
তিনি পুলিশ সুপারকে বলেন, ‘‘এখানে আমরা গত ২০ বছর ধরে ক্যাম্প অফিস করছি। এই জমি আমার এক ছোটবেলার বন্ধুর জমি। এখানে কর্মীরা বিশ্রাম নেন। আমি নিজেও বসি।” পুলিশ সুপার বলেন, গণনাকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে তিনি ক্যাম্প অফিস করতে দেবেন না। মন্ত্রী দাবি করেন, ওই জমিটি গণনাকেন্দ্রের মূল দরজা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে পড়ে না। মন্ত্রী এবং পুলিশ সুপারের মধ্যে ক্রমশ ওই আলোচনা বচসার আকার নেয়। কারণ পুলিশ সুপার কোনও ভাবেই মন্ত্রীর যুক্তি মেনে ক্যাম্প অফিস করার অনুমতি দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পাল্টা মন্ত্রী বলেন,‘‘এখানে ক্যাম্প করতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই।” এ ভাবেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেজাজ হারিয়ে পুলিশ সুপারের উদ্দেশেমন্ত্রী হিন্দিতে বলেন,‘‘ইলেকশন কিতনে দিন রহেগা? ইসকে বাদ কেয়া হোগা?’
আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তৃণমূল নেতাকে মার! কাঠগড়ায় বিজেপি
পুলিশ সুপারের অনড় অবস্থান দেখে তারপরই রণে ভঙ্গ দেন মন্ত্রী। পরে পুলিশ সুপার বলেন,জেলা পুলিশ সুপার হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায় তাঁর। তাই তিনি যদি প্রয়োজন বোধ করেন তবে তিনি ওই নিষেধাজ্ঞা ১০০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ২০০ মিটারও করতে পারেন।তিনি বলেন, গোটা বিষয়টি তিনি বিকেলের মধ্যে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবেন। গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণনা এবং স্ট্রংরুমের ভিতর এবং আশপাশের এলাকা মিলিয়ে ৪ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন থাকবে। আরও ৬ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন থাকবে বিভিন্ন থানায়। গননা পরবর্তী কোনও হিংসার ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করার জন্য।
অমিত কুমার সিংহ আগে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবেও কাজ করে গিয়েছেন। কোচবিহারে নির্বাচনের দু’দিন আগে পুলিশ সুপারের পদে থাকা অভিষেক গুপ্তকে কমিশন অপসারণ করে দায়িত্ব দেয় অমিত কুমার সিংহকে।
ঘটনার পর মন্ত্রী অভিযোগ করেন, বর্তমান পুলিশ সুপার পক্ষপাতিত্ব করছেন। তিনি বলেন,‘‘নির্বাচনের দিন বিজেপি প্রার্থী স্ট্রং রুম চত্বরে প্রায় ৪০০-৫০০ লোক নিয়ে বসেছিলেন। তখন পুলিশ সুপারের নজর ছিল না। আমরা ক্যাম্প করলেই তাঁর আপত্তি।’’