general-election-2019-west-bengal

মহিলা প্রার্থী কি কম পড়িয়াছে?

সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

শাসক ও বিরোধী পক্ষ মিলিয়ে অভিনেত্রী আছেন অন্তত চার জন। অধ্যাপিকাও রয়েছেন একাধিক। এমনকি এক প্রাক্তন মহিলা আইপিএস-ও এ বার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে শামিল। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে মোট প্রার্থীদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা খুবই কম।

Advertisement

সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্যে প্রথম থেকে ছ’দফা পর্যন্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মোট প্রার্থীর মাত্র ১০.১৪ শতাংশ মহিলা। সারা ভারতে এই হার নয় শতাংশ।

ওই দুই সংস্থার যৌথ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, প্রথম পর্বের ভোট থেকে আগামী রবিবারের ষষ্ঠ দফা পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৩৩টি আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫৫। তাঁদের মধ্যে মহিলা মাত্র ৩৬ জন। কংগ্রেস, বিজেপি এবং বাম শিবিরের তালিকায় মহিলা প্রার্থী অনেক কম। সে-দিক থেকে মহিলা প্রার্থীর নিরিখে বরং অনেকটাই এগিয়ে আছে তৃণমূল।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে যে-ক’জন মহিলা প্রার্থী আছেন, সেই তালিকায় তারকার অভাব নেই। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তালিকায় মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জহান, মুনমুন সেনের মতো নায়িকারা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অপরূপা পোদ্দারের মতো বিদায়ী সাংসদেরাও। এমনকি তৃণমূলের তালিকায় প্রয়াত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসের মতো আনকোরা প্রার্থীও আছেন। বিজেপির তালিকায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রী রয়েছেন, তেমনই আছেন প্রাক্তন আইপিএস, বিতর্কিত ভারতী ঘোষও। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে প্রার্থী-তালিকায় মহিলা এত কম কেন?

পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচের রাজ্য কো-অর্ডিনেটর উজ্জয়িনী হালিম বলছেন, ‘‘সমাজ যে এখনও পুরুষশাসিত, সেটাই বারবার প্রমাণ হচ্ছে। সঙ্ঘ পরিবারের এক নেতা তো রান্নাঘর ও সন্তান প্রতিপালনই মহিলাদের আসল কাজ বলে দেগে দিয়েছেন!’’ উজ্জয়িনী জানান, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। তাই দলীয় তালিকায় মহিলার সংখ্যার বিচারে তৃণমূল অনেক এগিয়ে থাকলেও সেই ছবি সব দলে দেখা যাচ্ছে না। ফলে মহিলারা পিছিয়েই থাকছেন। এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে, পর্যবেক্ষণ উজ্জয়িনীর।

রাজনীতিতে মেয়েদের কম প্রতিনিধিত্বের পিছনে কার্যত পুরুষতন্ত্রকে দায়ী করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষিকা সুস্মিতা ভট্টাচার্যও। তাঁর মতে, জনপ্রতিনিধি হয়ে মেয়েরা সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা পুরুষেরা মানতে পারেন না। পুরুষেরাই নীতি প্রণয়ন করবেন বা সিদ্ধান্ত নেবেন, এটাই প্রচলিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া রাজনীতির মতো সর্বক্ষণের কাজে মেয়েদের যোগদানের ক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক বিধিনিষেধও থাকে। তাই পারিবারিক ঐতিহ্য না-থাকলে রাজনীতির প্রথম সারিতে মেয়েদের উঠে আসার নিদর্শন খুব বেশি নয়। তবে ইদানীং প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষিত মেয়েরা রাজনীতিতে আসছেন। ‘‘এক সময় কর্পোরেট বা সর্বক্ষণের চাকরিতে মেয়েদের রীতিমতো ব্রাত্য করে রাখা হত। কিন্তু ইদানীং সেই ধারায় বদল এসেছে। রাজনীতিতেও নতুন প্রজন্মের মেয়েরা এগিয়ে আসছেন। এটা বহরে ছোট হলেও পরিস্থিতি বদলের ক্ষেত্রে ভাল লক্ষণ,’’ বলছেন সুস্মিতাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন