প্রতীকী ছবি।
উপরে সাঙ্ঘাতিক লড়াই! কিন্তু ভিতরে এক পক্ষের বিকাশ মানে অন্যের বিনাশ নয়! বরং, উল্টোটাই।
রাজ্যে একটার পর একটা উপনির্বাচন বা স্থানীয় স্তরের নির্বাচন পেরোচ্ছে আর চাষ বাড়ছে পদ্মের। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে কড়া হুঙ্কার দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বিজেপি-র ভোটবৃদ্ধিতে আখেরে তৃণমূলের জয়ের রাস্তা যে ভাবে মসৃণ হয়ে যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত বাকি দুই বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, বিজেপি-র ভোট বাড়ছে কিন্তু তৃণমূল জিতছে— এই ধারায় তাদের পক্ষে ময়দানে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে!
সবংয়ের মতো নোয়াপাড়া বিধানসভা ও উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও বাম-কংগ্রেস কোনও সমঝোতা হচ্ছে না। সিপিএম দুই কেন্দ্রে যথাক্রমে গার্গী চট্টোপাধ্যায় ও সাবিরউদ্দিন মোল্লাকে প্রার্থী করেছে। কংগ্রেসের তরফেও নোয়াপাড়ার কাউন্সিলর গৌতম বসু এবং উলুবেড়িয়ায় আইনজীবী মুন্সি মতিয়ার রহমানের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা। প্রচার শুরুর আগে দু’দলের নেতৃত্বই বিজেপি-র বিপদ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। সাম্প্রতিক কালে বনগাঁ ও কোচবিহার লোকসভা বা দক্ষিণ কাঁথি, সবং বিধানসভা— সব উপনির্বাচনে বিজেপি-র ভোট বেড়েছে। কংগ্রেস ও বামেদের ভোটবাক্সে যত রক্তক্ষরণ হয়েছে, ততই বিকশিত হয়েছে পদ্ম। আর বিপুল ভোটে জিতে আসন ঘরে তুলেছে তৃণমূল।
বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, বিজেপি ভোট বাড়িয়ে নিয়ে তাঁদের পথে বসিয়ে দিলে ২০১৯ সালে তৃণমূলের জন্য রাজ্যের প্রায় সব লোকসভা আসনই মজবুত! এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের গোটাদুয়েক বাদে সব আসন তৃণমূল জিতে গেলে আশ্চর্য হব না!’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘কে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ হবে, আমরা ভেবে কী করব! মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন।’’
আরও পড়ুন: বিভীষণদের নকশা ধরা পড়েছে: শুভেন্দু
এখনও পর্যন্ত সিপিএমের যে তিনটি জেলা সম্মেলন হয়েছে, প্রতিটিতেই আলোচনা হয়েছে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত ও তৃণমূলের ফায়দার প্রসঙ্গ। সিপিএমের জেলা প্রতিনিধি ও নেতৃত্বের যুক্তি, বাকি বিরোধীদের ঘর ভেঙে ভোট যাচ্ছে বিজেপি-র দিকে। তৃণমূলেরও কিছু ‘বিক্ষুব্ধ’ অংশের ভোট গেরুয়া বাক্সে যাচ্ছে। সেই পথেই সবংয়ে এক লাফে ১৫% ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিভীষণদের দৌলতে তৃণমূলের যা ক্ষতি হচ্ছে, শাসক দল হিসাবে প্রশাসনের যন্ত্র হাতে রেখে এবং বুথ ‘দখল’ করে সেই ঘাটতি মিটিয়ে আরও কিছুটা ভোট যোগ করে জয় নিশ্চিত করে নিচ্ছে তারা!
তৃণমূল-বিজেপি এই যুগলবন্দির বিপদ মাথায় রেখেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, ‘‘উলুবেড়িয়া ও নোয়াপাড়ায় ওই দুই দলকেই পরাস্ত করার লক্ষ্যে আমাদের প্রতি বুথে পতাকা তুলে ধরতে হবে। নাগরিকের ভোটদানের অধিকার রক্ষা করতে আমাদের আরও বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মতে, ‘‘অতীতে জ্যোতি বসু নাম না করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতেন। কংগ্রেসের ভোট ভেঙে তৃণমূল পেতো, জিতে যেতো সিপিএম! এখন বিজেপি-র জন্য একই সুবিধা তৃণমূল পাচ্ছে।’’ আশঙ্কার মাঝেও তাঁদের আশা, মানুষ এই অঙ্ক বুঝে ফেলার পরে বিরোধী ভোট একত্রিত হলে খেলা ঘুরতে শুরু করবে।