বাংলায় এখন মদের স্রোতে ভাটা!
সল্টলেকের আইবি ব্লকে কড়া পানীয়ের বেশ বড় দোকান। ব্র্যান্ড-এর বিপুল বৈচিত্র্যের কারণে সেখানে ভালই ভিড় হয়। দিন দুয়েক আগে এক নিয়মিত খদ্দের দোকানে গিয়ে দেখলেন, একটি মাত্র ব্র্যান্ড-এর বিয়ার পড়ে আছে। তা-ও স্ট্রং বিয়ার। নিতে ‘কিন্তু কিন্তু’ করছেন দেখে দোকানদার জানালেন, দু’দিন পর এটাও হয়তো মিলবে না।
দোল ১২ মার্চ। তার ঠিক আগে কলকাতা তথা রাজ্যের অধিকাংশ মদের দোকানের ছবিটা এই। পছন্দের ব্র্যান্ড পাওয়া যাচ্ছে না। যা-ও মিলছে, সীমিত। অথচ দোলের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা প্রতি বছর চার গুণ বেশি মদ তোলেন। তার উপর অন্যান্য বছর দোলে রাজ্য জুড়ে মদের দোকান বন্ধ থাকলেও এ বার দোলের দিন দোকান খুলবে। তবে দুপুর ২টোয়।
‘অল বেঙ্গল ফরেন লিকর সেলস রিপ্রেজেনটেটিভস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর হিসেব বলছে, গোটা রাজ্যে রোজ গড়ে মদ ও বিয়ার মিলিয়ে ৯৫ লক্ষ পেটি (প্রতি পেটিতে ১২টি বোতল) বিক্রি হয়। এর ৪০-৪২ শতাংশ বিক্রি হয় কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি অন্তত ৪০% কমেছে। কমছে দোকানের মজুতও। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে একটি মদের দোকানের মালিক রক্তিম মজুমদারের কথায়, ‘‘এমনিতে ১০-১৫ দিনের মতো মদ মজুত থাকে। এখন সেটা দু’-তিন দিনে নেমে এসেছে।’’ কিন্তু কেন?
আসলে মদের পাইকারি বিক্রি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পানীয় নিগম’ গঠন করার পর পাইকাররা উৎপাদকদের কাছ থেকে মদ কেনা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এপ্রিল থেকে নিগম সক্রিয় হলে তাঁদের আর কোনও ভূমিকা থাকবে না। তাই এখন থেকেই সতর্ক হচ্ছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই কারবার মূলত ধারে হয়। উৎপাদক সংস্থা ধার দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের আর পাইকাররা ধার দেন খুচরো বিক্রেতা বা দোকান মালিকদের। ওয়াটারলু স্ট্রিটের একটি ফরেন লিকার অফ শপের মালিক রণজয় প্রামাণিক বলেন, ‘‘এখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের ধার দিচ্ছেন না। উল্টে বকেয়া টাকা তুলে নিতে চাইছেন।’’ পাইকারি ব্যবসায়ীদের এই অবস্থা দেখে উৎপাদক সংস্থাগুলিও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের ধার দেওয়া বন্ধ করেছে। রাজ্যে মদের পাইকারি ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১০০-র বেশি। তাঁদের ৩০-৩৫ জনের ব্যবসা কলকাতায়। দূরবর্তী জেলাগুলির অবস্থা আরও খারাপ।