বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে মদন মিত্র। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জন্মদিনে জামিনের আবেদন না-জানিয়ে মদন মিত্রের জন্য জেলে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার আর্জি জানালেন তাঁর আইনজীবীরা। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।
বৃহস্পতিবার ছিল মদন মিত্রের ৬১ তম জন্মদিন। এ দিন আলিপুর আদালতে গাড়ি থেকে নামতেই আগের মতোই তাঁর দিকে ফুল ছোড়েন অনুগামীরা। তাঁদের আশা ছিল, দাদা ফের জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর আইনজীবীরা সেই আবেদনটুকুই না-জানানোয় অনুগামীরা রীতিমতো হতাশ হন। কেন জামিনের আবেদন করা হল না? মদন মিত্রের অন্যতম আইনজীবী পার্থ মুখোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট আমার মক্কেলের জামিনের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভবনা নেই বলেই ওই আবেদন করা হয়নি। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে উচ্চ আদালতে ফের জামিনের আবেদন করা হবে।’’
জেল হেফাজতে ১৪ দিন থাকার পর এ দিন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরীর আদালতে মদন মিত্রকে পেশ করা হয়। তাঁর আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বিচারকের কাছে তিনটি আবেদন করেন। এক: গত ৩১ অক্টোবর আলিপুরের অবকাশকালীন আদালত মদন মিত্রের জামিন মঞ্জুর করলেও তাঁর পাসপোর্ট এবং জামানতের ১ লক্ষ টাকা জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পরে নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্ট বাতিল করে দেওয়ায় মদনবাবু ফের জেল হেফাজতে রয়েছেন। সুতরাং তাঁর পাসপোর্ট ও জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। দুই: জেল হেফাজতে মদনবাবুর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিন: তাঁর ‘প্রথম শ্রেণির’ বন্দির মর্যাদা বজায় রাখা হোক।
বিচারক তিনটি আবেদনই মঞ্জুর করেন। মদনবাবুকে ফের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশও দেন তিনি।
এ দিন বেলা ২টো নাগাদ রাজ্যের সদ্য-প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীকে আলিপুর আদালতে আনা হয়। তাঁর পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা। গাড়ি থেকে নামতেই গুটিকয় অনুগামী তাঁর দিকে ফুল ছুড়ে দেন। এতে খানিক বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলে ওঠেন, ‘‘আমি তো এ সব করতে বারণ করেছি!’’ তার পর এজলাসে ঢুকে একটি চেয়ারে বসে পড়েন তিনি। বড় ছেলে স্বরূপকে দেখা যায় তাঁর কানে কানে কথা বলতে। এজলাসে মদনবাবুকে ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। বহিরাগতদের ঢোকাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
আইনজীবীদের সওয়াল শেষ হতেই মদন এজলাস ছাড়েন। তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আপনাকে বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হবে না শোনা যাচ্ছে? কিছু ক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে আপনারাটিকিট দিন!’’ পরের প্রশ্ন ছিল, কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী একটি সরকারি অনু্ষ্ঠানে বলেছেন, কেউ ব্যক্তিগত ভাবে চুরি করলে দল দায় নেবে না। দল নয়, ব্যক্তি চোর হয়। আপনি কী বলবেন? এ বারও উত্তর দিতে সামান্য সময় নেন মদন। তার পর শুধু বলেন, ‘‘উনি ঠিকই বলেছেন।’’
জন্মদিন উপলক্ষে মদনবাবুর পরিবারের লোকেরা বিকেলে জেলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সে সময়ে প্রিয় নাতির সঙ্গে কিছু ক্ষণ খুনসুটি করেন তিনি। সেই সময়টুকু ছাড়া আগাগোড়া মদনের মুখে ছিল বিষাদের ছায়া।