নথির গেরো ও গরহাজিরা-জটে মদনের জামিন

মামলা ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু সারদা কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী মদন মিত্র গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি ভিত্তিতে জামিনের আবেদনের শুনানি চেয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর প্রবীণ আইনজীবী হাজির না-থাকায় জামিনের আবেদন শুনল না হাইকোর্ট। এই নিয়ে তিন-তিন বার পিছিয়ে গেল রাজ্যের পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

মামলা ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু সারদা কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী মদন মিত্র গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি ভিত্তিতে জামিনের আবেদনের শুনানি চেয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর প্রবীণ আইনজীবী হাজির না-থাকায় জামিনের আবেদন শুনল না হাইকোর্ট। এই নিয়ে তিন-তিন বার পিছিয়ে গেল রাজ্যের পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি।

Advertisement

হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল ওই অভিযুক্তের জামিনের আবেদন শোনা হবে বলে আগে থেকেই স্থির হয়ে আছে। সে-দিনই শুনানি হবে। এর আগে ৭ এপ্রিল এবং তারও আগে ২৪ মার্চ হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দু’দিনই শুনানি স্থগিত হয়ে যায়।

সারদা রিয়েলটি মামলায় অভিযুক্ত মদনবাবুকে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে সিবিআই। দু’দফায় ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হেফাজতে রাখা হয় তাঁকে। তার পরে মন্ত্রীকে জেল-হাজতে পাঠায় আলিপুর আদালত। কিন্তু জেল-হাজতে থাকাকালীন মন্ত্রী একাধিক বার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বেশ কয়েক বার। তার মধ্যে বেশ কিছু দিন আইসিইউয়ে রেখে তাঁর চিকিৎসা চালানো হয়।

Advertisement

মন্ত্রীর শরীরস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই জরুরি ভিত্তিতে জামিনের আবেদন শোনার জন্য আর্ঝি জানান তাঁর কৌঁসুলিরা। সারদা মামলায় ধৃতদের মধ্যে প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, ব্যবসায়ী সৃঞ্জয় বসু, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার-সহ অনেকেই ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কারও জামিন হয়েছে হাইকোর্টে। কেউ কেউ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নিম্ন আদালতের নির্দেশে। কিন্তু মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি স্থগিত হয়ে যাচ্ছে বারবার। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রের প্রতিলিপি সিবিআই-এর কৌঁসুলিরা পাননি বলে জানানোয় ৭ এপ্রিল জামিনের শুনানি পিছিয়ে যায়।

মদনবাবুর আইনজীবী শেখর বসু এ দিন হাইকোর্টে জানান, তাঁর মক্কেল গুরুতর অসুস্থ। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। মন্ত্রীর অসুস্থতা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথিপত্র তাঁর কাছে আছে। সেই নথিপত্র তিনি আদালতে পেশ করতে চান। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রীর জামিনের আবেদন শোনার জন্য বিচারপতিদের কাছে আবেদন জানান তিনি। আইনজীবী শেখরবাবু আরও জানান, সিবিআই-এর আইজীবী মহম্মদ আসরাফ আলি আদালতে উপস্থিত আছেন। তাই শুনানি শুরু হতে কোনও বাধা নেই।

কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সিবিআই তাদের তরফে এই মামলার দায়িত্ব দিয়েছে প্রবীণ আইনজীবী কে রাঘবচারিয়ালুকে। আসরাফ আলি তাঁকে সহযোগিতা করছেন মাত্র। রাঘবচারিয়ালুর অনুপস্থিতিতে বেঞ্চ ওই অভিযুক্তের জামিনের আবেদন শুনবে না। আসরাফ আলিও আদালতে জানান, রাঘবচারিয়ালু এ দিন ভুবনেশ্বরের আদালতে সিবিআই-এর অন্য একটি মামলার শুনানিতে গিয়েছেন। প্রবীণ কৌঁসুলির অনুপস্থিতিতে তিনি মামলার শুনানিতে যোগ দিতে পারবেন না।

এ দিন শুনানি আটকে যাওয়ার কারণ যদি হয় সিবিআই-এর প্রবীণ কৌঁসুলির অনুপস্থিতি, আগের দু’দিনই শুনানি পিছিয়ে গিয়েছিল মন্ত্রীর চিকিৎসা-নথি আদানপ্রদানকে ঘিরে টানাপড়েনে। ৭ এপ্রিল মন্ত্রীর আইনজীবী হাইকোর্টের ওই বেঞ্চেই তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান। তিনি বলেন, এসএসকেএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মদনবাবুর অসুস্থতা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের হাতে সেই সব নথির প্রত্যয়িত প্রতিলিপি রয়েছে। তাই জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হতে বাধা নেই।

কিন্তু সিবিআই-এর আইনজীবীরা সে-দিন আদালতে জানান, ওই অভিযুক্তের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথির প্রত্যয়িত প্রতিলিপি তখনও তাঁদের হাতে পৌঁছয়নি। সেই সব নথিপত্র সম্পর্কে তদন্তকারীদের
বক্তব্য ঠিক কী, সেটাও তাঁদের জানা নেই। তাই তাঁরা ওই মামলার শুনানিতে সওয়াল করতে চান না। এই অবস্থায় সে-দিন ওই মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়।

মন্ত্রীর চিকিৎসা-নথি নিয়ে জট পাকিয়েছিল তার আগেই। অভিযুক্ত যে-হেতু সিবিআই-এর তদন্তাধীন, তাই তাঁর চিকিৎসার কাগজপত্র সংগ্রহ করে জোগান দেওয়ার কথা ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থারই। নিয়ম অনুযায়ী ধৃতের কৌঁসুলিদের হাতেও সেই নথিপত্র তুলে দিতে হবে তাদের। কিন্তু ২৪ মার্চ মদনবাবুর কৌঁসুলিরা আদালতে জানান, তাঁদের মক্কেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি দেয়নি সিবিআই। সেই জন্য তাঁরা মামলার শুনানিতে যোগ দিতে পারছেন না। আবার নিজেদের উদ্যোগে মন্ত্রীর কৌঁসুলিরা যখন চিকিৎসা-নথি সংগ্রহ করে আনলেন, তখন (৭ এপ্রিল) তদন্ত সংস্থার আইনজীবীরা জানিয়ে দিলেন, অভিযুক্তের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে হাসপাতালের কাগজপত্র তাঁদের
হাতে পৌঁছয়নি।

এই নথি-জট কাটতে না-কাটতেই বৃহস্পতিবার সিবিআই-এর প্রবীণ আইনজীবীর গরহাজিরায় আটকে গেল মন্ত্রীর জামিনের আর্জির শুনানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন