শনিবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মদন মিত্র। ছবি: রণজিত্ নন্দী।
তিনি স্বভাবতই খুশি। অনেকটাই খুশি। দীর্ঘ ২১ মাস (মাঝের ১৯ দিন বাদ দিয়ে) বন্দি থাকার পর অবশেষে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেও বিষাদের ছায়া ফুটে উঠেছে তাঁর মুখে। তিনি মদন মিত্র। তিনি আর প্রভাবশালী নন, এই যুক্তিতে শুক্রবার বিকালে আলিপুর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। পাশাপাশি এটাও নির্দেশ দিয়েছে এখনই তিনি ভবানীপুর থানা এলাকা ছেড়ে কোথাও বেরোতে পারবেন না। বাড়ি কালীঘাট থানা এলাকায় হলেও উপায় নেই সেখানে যাওয়ার। মহামান্য আদালতের নির্দেশ যে তাঁকে মানতেই হবে। অতএব আস্তানা খুঁজে নেওয়া ভবানীপুর এলাকাতেই। ঠিকও হয়ে গেল কোথায় তিনি উঠবেন। ঠিকানা, এলগিন রোডের একটি হোটেল।
আনন্দের দিনে বিষাদ কেন মদনের গলায়?
তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিলেন। বাড়ির এত কাছে এসেও বাড়িতে যেতে পারলেন না যো! তবে আদালত নির্দেশ দিলে তিনি ‘দৌড়তে দৌড়তে’ বাড়ি যাবেন। এ তো গেল প্রথম কারণ। তার পরেও থেকে গিয়েছে বিষাদ, বরং বিষাদ না বলে অভিমান বলাই ভাল। কেন? তাঁর আক্ষেপ, দুর্নীতি না করেও তাঁকে চোর অপবাদ দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তবে আপাতত সেই কষ্ট ভুলে পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে আগ্রহী তিনি। বাড়িতে ফিরে বই পড়তে চান, নাতির সঙ্গে খেলতে চান। আর শুধু বিশ্রাম এবং বিশ্রাম। এর বাইরে এই মুহূর্তে তিনি ভাবতে মোটেই রাজি নন। তবে আদালত যদি নির্দেশ দেয়, এ বারের দুর্গাপুজো তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। এত দিন বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তা হিসাবে ছিলেন। এখন আর সেই ভূমিকা তিনি পালন করতে চান না। “আমি যে এখন সিনিয়র সিটিজেন”— হাসতে হাসতে বললেন মদন। তিনি এটাও স্বীকার করলেন নাস্তিক ছিলেন এত দিন। এ বার পুরো আস্তিক ভাবে দুর্গাপুজো করবেন, অঞ্জলি দেবেন। তবে এ-ও জানান, সব কিছুই নির্ভর করছে আদালতের উপর।
সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পর জেলে গিয়েছিলেন মদন। দীর্ঘ ২১ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। সক্রিয় রাজনীতি থেকে এখন বহু ক্রোশ দূরে। মন্ত্রিত্ব গিয়েছে, বিধায়কের পদও হারিয়েছেন। তা হলে এই অবস্থায় তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ কী? মদন বলেন, “প্রথম যখন শুরু করেছিলাম তখন মাটিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার পর একেবারে পাহাড়ে উঠে পড়েছিলাম। এখন আবার নিঃসঙ্গ হয়ে সমুদ্রের পাড়ে বালির উপর একা একা হাঁটছি।”
দল যদি তাঁর পাশেই থাকে, তা হলে তিনি নিজেকে কেন নিঃসঙ্গ বলছেন? মদন জানান, এটাই ভুল ভাবনা। ব্যক্তি হিসাবে তিনি নিঃসঙ্গ। দলের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। দল সব সময়েই তাঁর পাশে আছে। তিনি কোনও নির্দল নন যে দল তাঁর পাশে থাকবে না।
তবে গণদেবতাই সবচেয়ে বড় সে কথা এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। জানালেন, দল, পরিবার এবং মানুষের পাশে তিনি সব সময় ছিলেন। কখনও বিশ্বাসঘাতকতা বা বেইমানি করেননি। তাঁর আশা একদিন সত্যটা প্রকাশিত হবেই।
তবে তিনি যেটা বার বার বলেছেন তা হল, বিশ্বাসঘাতকতা ও বেইমানের অপবাদ। এটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
আরও খবর...
জেল থেকে ছাড়া পেলেন মদন মিত্র, ঠাঁই আপাতত এলগিন রোডের হোটেলে