Mahua Moitra Pinaki Mishra

বার্লিনের প্রাসাদে বিয়ে সারলেন মহুয়া মৈত্র, পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের

৬৫ বছরের পিনাকী এবং ৫১ বছরের মহুয়া দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিবাহ। খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিদেশে বা দেশের কোনও প্রাচীন প্রাসাদ-কেল্লায় ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ নতুন নয়। কিন্তু দুই রাজনীতিকের এ হেন বিবাহ দেশে বিরল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ১৪:০৩
Share:

বার্লিনে বিয়ে সারলেন মহুয়া-পিনাকী। —নিজস্ব চিত্র।

পুরীর সঙ্গে জুড়ে গেল কৃষ্ণনগর। মিশ্রের সঙ্গে সংসার পাতলেন মৈত্র। চার হাত এক হল প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদের।

Advertisement

বন্ধুত্ব গত কয়েক বছরের। ঘনিষ্ঠেরা জানতেনও, চার হাত এক হবে। গত ৩০ মে, শুক্রবার জার্মানির বার্লিন প্রাসাদের ছাদে পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ৬৫ বছরের পিনাকী এবং ৫১ বছরের মহুয়া দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিবাহ। খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিদেশে বা দেশের কোনও প্রাচীন প্রাসাদ-কেল্লায় ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ নতুন নয়। কিন্তু দুই দেশজ রাজনীতিকের এ হেন বিবাহ দেশে বিরল। যদিও একে সে ভাবে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ বলা যায় না। ভিড়ভাট্টা এড়াতেই বার্লিন বেছে নেওয়া বলে জানাচ্ছে যুগলের ঘনিষ্ঠমহল। আপাতত পিনাকী-মহুয়া ইউরোপে মধুচন্দ্রিমা যাপনে ব্যস্ত।

তিনি যে পিনাকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন, তা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন মহুয়া। তাঁর কাছ থেকে ‘ছুটি’ নিয়েই তিনি বিবাহ উপলক্ষে বিদেশে যান। জুন মাসের শেষে পিনাকী এবং মহুয়ার দেশে ফেরার কথা। নবদম্পতিকে বিবাহের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

এর আগে ২০১৯ সালে বসিরহাট লোকসভায় তৃণমূলের হয়ে ভোটে জেতার পরে নিখিল জৈনের সঙ্গে তুরস্কের বোদরুম শহরে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’য়ে গিয়েছিলেন নুসরত জাহান। যে কারণে সাংসদ হিসাবে শপথ নিতেও তাঁর দেরি হয়ে গিয়েছিল। নুসরত অভিনেত্রী। পুরোদস্তুর রাজনীতিক ছিলেন না। মহুয়া আদ্যোপান্ত রাজনীতিক। পিনাকীও তা-ই। তিনি পেশায় আইনজীবী।

জার্মানির বার্লিন প্রাসাদের ছাদে মহুয়া মৈত্র এবং পিনাকী মিশ্র। —নিজস্ব চিত্র।

মহুয়া দীর্ঘ দিন মার্কিন অর্থলগ্নি সংস্থা ‘জেপি মর্গ্যান অ্যান্ড চেস’-এ কর্মরত ছিলেন। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন তিনি। সেই পর্বেই ডেনিশ ফিনান্সার লার্স ব্রর্সনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মহুয়ার। দু’জনের বিবাহও হয়। পরে তাতে ছেদ পড়ে। মহুয়ার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরে লার্স ফের বিবাহ করেন। তাঁর সন্তানও রয়েছে। অন্য দিকে, পিনাকী প্রথম বিবাহ করেন ওড়িশারই সঙ্গীতা মিশ্রকে। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। বেশ কয়েক বছর হল পিনাকী এবং সঙ্গীতার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

অবসরে পিনাকী ও মহুয়া। —নিজস্ব চিত্র।

মাঝে মহুয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। গোড়ায় তা মধুর থাকলেও পরে দু’জনের সম্পর্ক তিক্ততার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। পোষ্যের মালিকানা নিয়ে জয়-মহুয়ার বিতণ্ডা থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। লোকসভায় গত মেয়াদে মহুয়ার বিরুদ্ধে উপহার এবং উপঢৌকন নিয়ে সংসদে গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠেছিল। যার ভিত্তিতে সংসদের এথিক্স কমিটির সুপারিশে মহুয়াকে শেষ কয়েক মাস বহিষ্কৃত হয়ে থাকতে হয়েছিল। সেই অভিযোগ যাঁরা প্রকাশ্যে এনেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয়। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। জয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরেই পিনাকীর সঙ্গে মহুয়ার ঘনিষ্ঠতা বন্ধুত্বের পরের পর্যায়ে পৌঁছোয়। দু’জনে ইউরোপ ভ্রমণেও গিয়েছিলেন গত বছর।

অবসরে মহুয়া ও পিনাকী। —নিজস্ব চিত্র।

ঘটনাচক্রে, মহুয়া এবং পিনাকী দু’জনেরই রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেস থেকে। যদিও মহুয়া খুব কম সময় কংগ্রেসে ছিলেন। তবে পিনাকী ১৯৯৬ সালে প্রথম কংগ্রেসের টিকিটেই সাংসদ হয়েছিলেন পুরী থেকে। পরে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজু জনতা দলে যোগ দেন। বিজেডি-র হয়েই ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পুরী থেকে জিতেছিলেন পেশায় আইনজীবী পিনাকী। যদিও গত লোকসভা ভোটে তাঁকে টিকিট দেননি বিজেডির সর্বোচ্চ নেতা তথা ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ওড়িশার রাজনীতিতে গুঞ্জন রয়েছে, মহুয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই বিতর্ক এড়াতে পিনাকীকে প্রার্থী করেনি বিজেডি। পাল্টা এ-ও শোনা যায়, পিনাকীই আর প্রার্থী হতে রাজি হননি। অন্য দিকে, ২০০৯ সালে জেপি মর্গ্যানের চাকরি ছেড়ে এসে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন মহুয়া। রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’তেই তাঁর রাজনৈতিক হাতেখড়ি। ২০১০ সালে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৬ সালে প্রথম করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। বলিয়ে-কইয়ে মহুয়াকে তার পরে সংসদে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ এবং ২০২৪— পর পর দু’বার কৃষ্ণনগর থেকে নির্বাচিত হন মহুয়া।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে পিনাকীর সঙ্গে কেক কাটার একটি ছবি পোস্ট করেন মহুয়া। তাঁর ওই পোস্টে অভিনন্দন জানিয়েছেন অভিষেক। জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

মহুয়া মৈত্র এবং পিনাকী মিশ্রকে শুভেচ্ছা জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement