সকাল থেকে মেঘলা। কলকাতা শহরে অফিস টাইমে ট্যাক্সি কিংবা ওলা-উবার পেতে বেশ কষ্ট করতে হয়। মঙ্গলবারেও গাড়ি পেতে বেশ দুর্ভোগ হল। ভগ্নিপতি সুমন ফোনে অনেক কসরত করে গাড়ি নিয়ে হাজির হলেও আমাদের বেরোতে একটু দেরিই হল। অসুস্থ বাবাকে খুব কষ্ট করে তুলে আমরা স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। মা’কে নিয়ে আমরা চারজন। বেহালার শীলপাড়ার কাছ থেকে উঠেই দ্বাদশ শিব মন্দিরের উদ্যেশ্যে কপালে হাত ঠেকালো মা। গাড়ি উঠলো সেই ডায়মন্ডহারবার রোডে। তারাতলার কাছে আসতেই গাড়ি একেবারে থেমে গেল। চালকের মতে এই এলাকা কলকাতার একটা গোলমেলে এলাকা। যতই ফ্লাই ওভার হোক, যতই ট্রাফিক পুলিশ থাকুক কোনও দিন যানজট কাটবে না। তারাতলা হয়ে মাঝারহাট সেতুর দিকে এগোতে তাকলাম আমরা। ঘড়িতে তখন প্রায় ১১টা। শিয়ালদহ-বজবজ লাইনের মাঝেরহাট রেল ষ্টেশন। পুরনো ঘিঞ্জি এলাকা। বেশির ভাগ দেওয়ালে শ্যাওলা ও আগাছা। মাঝের হাট সেতু ওঠার সময়ও সেটা লক্ষ্য করলাম। সেতুর সংলগ্ন দেওয়াল ও রেলিং ঘিরেও কোথাও শ্যাওলা কোথাও আগাছা। বড় বড় ঘাস। কতদিন সেখানে হাত পরেনি কে জানে। সেতুর রেলিঙে কিছু দিন আগে রঙের প্রলেপ পরেছে। কিন্তু ওই পযর্ন্ত। আমি গত তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে এই সেতু পার হচ্ছি। সেতুতে তেমন কিছু বদলেছে বলে মনে হয়নি। নিচে রেল লাইন। এই মাঝেরহাট ষ্টেশন দিয়ে যাতায়াতের সময়ও মনে হয়নি সেতুর কিছু সংস্কার হয়েছে কিছু। তারাতলা থেকে একবালপুরে পৌঁছতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলো। সেখানে সিএমআরআই হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার পর বেলা দুটো নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম। রাস্তায় তখন জল দাঁড়িয়ে। স্টেশন পৌঁছে টিভিতে খবরটা দেখে বুক কেঁপে উঠল, এই তো খানিক আগে পেরিয়ে এলাম সেতুটা! মা হাঁফাচ্ছে। ‘‘সে কি রে, এই তো এলাম!’’ ফের কপালে হাত ঠেকাল মা।