ইসলামপুরে দুই ছাত্রের মৃত্যু পুলিশের গুলিতে নয়: মুখ্যমন্ত্রী

ইসলামপুরে দুই ছাত্রের মৃত্যু পুলিশের গুলিতে হয়নি বলে দাবি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক এবং নিহত পড়ুয়াদের পরিবারের পাশে তিনি রয়েছেন বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘আরএসএস এবং বিজেপির প্ররোচনাতেই এই পরিণতি। বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার আগুন ছড়াতে দেব না।’’

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।

ইসলামপুরে দুই ছাত্রের মৃত্যু পুলিশের গুলিতে হয়নি বলে দাবি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক এবং নিহত পড়ুয়াদের পরিবারের পাশে তিনি রয়েছেন বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘আরএসএস এবং বিজেপির প্ররোচনাতেই এই পরিণতি। বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার আগুন ছড়াতে দেব না।’’ তাঁর প্রশ্ন, শিক্ষক নিয়োগে ছাত্ররা মাথা গলাবে কেন? মোদী সরকারের ব্যর্থতা এবং রাফাল-সহ যাবতীয় কেলেঙ্কারি ঢাকতেই বিজেপি এ সব ঘটাচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

Advertisement

এ দিকে ইটালিতে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরেই কলকাতায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। সকলেরই বক্তব্য, তদন্তের আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যখন পুলিশকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দিলেন তখন তদন্তের আর কোনও অর্থ হয় না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীই রায় দিয়ে দিয়েছেন। তার পর তদন্তে কী হবে? তাই আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছি।’’ আরএসএস নেতা জিষ্ণু বসুর চ্যালেঞ্জ, ‘‘রাজ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ প্রমাণ করুক, নইলে ক্ষমা চাইতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলে দেওয়ার পর কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে অন্য কথা বলে!’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তদন্তের শুরুতে এই মন্তব্য করলে তা প্রহসনে পরিণত হবে। তাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাইছি আমরা।’’

শনিবার মিলানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পুলিশের যা রিপোর্ট, তাতে ওই গুলি পুলিশের নয়। তা হলে গুলি এল কোথা থেকে? বোমাই বা কোথা থেকে এল? মুখে গামছা বেঁধে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা আসলে কারা?’’ উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারও বলেন, ‘‘পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবলদের বন্দুক ও রিভলভারের গুলির হিসেব মিলিয়ে দেখা গিয়েছে কেউ একটিও গুলি চালায়নি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপির বন্‌ধ ব্যর্থ হবেই, দাবি মমতার

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অশান্তি বাধাতে গুন্ডা ভাড়া করে আনা হয়েছিল। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, কোন শিক্ষক পড়াতে আসবেন, তা ছাত্ররা কখনও ঠিক করে কি? তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা, সংস্কৃত শিক্ষকের বেলায় কোনও সমস্যা হল না। তা হলে উর্দু শিক্ষকের ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দিল কেন? এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয় পড়াতেই পারেন। বাংলার শিক্ষক কি কোথাও প্রয়োজনে ইংরেজি ক্লাস নেন না?’’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপি পুরোদস্তুর পরিকল্পনা করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দুই ছাত্রের মৃত্যুর দায় বিজেপি-আরএসএসকে নিতে হবে।’’ মমতা বলেন, ‘‘লগ্নির খোঁজে আমি বছরে এক বার মাত্র বিদেশে যাই। কিন্তু রাজ্যের বাইরে, এমনকি দিল্লি গেলেও দেখি গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস। কিন্তু বাংলায় এমন ঘৃণ্য খুনের রাজনীতি আমরা বরদাস্ত করব না। পড়ুয়াদের প্রাণ খোয়ানোর দায় বিজেপি-আরএসএসকে নিতে হবে।’’ বিজেপিকে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক ঢুকিয়ে অশান্তি করা বন্ধ করুন। হরিয়ানায় মেধাবী মেয়েকে কিছু দিন আগেই ধর্ষণ করা হয়েছে। আগে সেই বর্বরতার দিকে তাকান।’’

মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ঘটনার কথা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই ডিআই-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দিনই ওই ডিআই-এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য শিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস-এর স্কুল কোথায় কোথায় আছে তা আগেই চিহ্নিত করেছিলাম। যে জেলাগুলির কথা বলেছিলাম, সেখানেই অশান্তি হচ্ছে। রায়গঞ্জে আরএসএস-এর একটি স্কুলকে আইসিএসসি বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে ওদের আগেও চিঠি দিয়েছি। আবারও দেব।’’

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইসলামপুরের ঘটনার প্রয়োচনায় যে সব বিজেপি-আরএসএস নেতা যুক্ত, তাঁদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে কোনও ভুল হয়েছে কি না, খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে তা-ও। এর পরেও বন্‌ধ ডাকা আসলে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের এক জোট হওয়ার চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement