Mamata Banerjee's Foreign Visit

মাদ্রিদে বাংলার দিদি আর দাদা! ‘লক্ষ্মীবারে’ লা লিগা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে শুরু মমতার লগ্নিসফর

কলকাতা ছেড়েছেন মঙ্গলবার সকালে। বুধবার স্পেনের স্থানীয় সময় দুপুরে মাদ্রিদে পৌঁছেছেন মমতা। দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকলে খানিক ক্লান্ত তিনি। মাদ্রিদে পৌঁছেই হোটেলে চলে যান।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

মাদ্রিদ শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:২৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বুধবার কাছাকাছি সময়েই নেমে পড়লেন বাংলার দিদি এবং দাদা। দিদি— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদা— সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মমতা এলেন কলকাতা থেকে দুবাই হয়ে। সৌরভ এলেন লন্ডন থেকে। তাঁর সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ও। লা লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মমতার বৈঠকে থাকবেন সৌরভ।

Advertisement

কলকাতা ছেড়েছেন মঙ্গলবার সকালে। বুধবার স্পেনের স্থানীয় সময় দুপুরে মাদ্রিদে পৌঁছেছেন মমতা। দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকলে খানিক ক্লান্ত তিনি। মাদ্রিদে পৌঁছেই হোটেলে চলে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু মমতার কর্মসূচি।

মমতার সঙ্গেই বাংলার প্রতিনিধিদলে এসেছেন শিল্পপতিরা। তাঁরাও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈঠকে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। পুস্তক প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’-এর দুই কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশুশেখর দে বসবেন স্পেনের প্রকাশনা জগতের কর্তাদের সঙ্গে। সন্ধ্যায় লা লিগার মহাকর্তা হাভিয়ার তেভেজ়ের সঙ্গে বৈঠক মমতার। সেখানে থাকবেন সৌরভ। থাকবেন কলকাতার দুই প্রধানের কর্তা মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত এবং মহামেডানের ইশতিয়াক আহমেদ। ভিসা জটিলতায় এখনও মাদ্রিদে এসে পৌঁছননি ইস্টবেঙ্গলের রূপক সাহা। তবে তিনিও বৃহস্পতিবার বৈঠকের আগে এসে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

মাদ্রিদ স্পেনের রাজধানী এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। পাশাপাশিই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ভরকেন্দ্র। একই সঙ্গে দক্ষিণ ইউরোপের প্রথম সারির অর্থনৈতিক ‘হাব’ও বটে। মাদ্রিদের পুর এলাকার মধ্যে পড়ে ‘টেলেফোনিকা’, ‘ইবেরিয়া’, ‘বিবিভিএ’ এবং ‘এফসিসি’র মতো প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর। গোটা দেশের ব্যাঙ্কিং কাজ-কারবারের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত হয় মাদ্রিদ থেকে।

গোটা ইউরোপে বাণিজ্যকেন্দ্রের নিরিখে মাদ্রিদ পঞ্চম। প্রথম চারটি— লন্ডন, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং আমস্টারডাম। সারা পৃথিবীতে প্রথম ৩৫টি বাণিজ্যিক ভাবে আকর্ষণীয় শহরের তালিকায় মাদ্রিদের স্থান সপ্তম। ফলে বাংলার প্রতিনিধি দল আশা করছে, ভবিষ্যতের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মাদ্রিদের বাণিজ্যিক বাঁধন পোক্ত হলে তাতে সুবিধাই হবে।

মাদ্রিদে রয়েছে উৎপাদন শিল্প। তার মধ্যে রয়েছে মোটরগাড়ি, বিমান নির্মাণ, রাসায়নিক শিল্প, ইলেকট্রনিক পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল্‌স, প্রসেস্‌ড খাবার, চামড়াজাত পণ্য। পর্যটন? পাঁচ বছর আগে মাদ্রিদে হোটেলের সংখ্যা ছিল ৭৯৩টি। ঘর ৪৩,৮১৬টি। টুরিস্ট অ্যাপার্টমেন্ট ২০,২১৭টি। আন্তর্জাতিক পর্যটক সবচেয়ে বেশি আসেন আমেরিকা, ইটালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং জার্মানি থেকে। রাস্তাঘাট ইত্যাদির নিরিখে মাদ্রিদ ইউরোপের যে কোনও অন্য শহরের মতোই। তবে এখন এখানে পর্যটনের ভরা মরসুম। হোটেল-টোটেলে জায়গা পাওয়া দুরূহ।

ইউরোপের যে কোনও শহরের মতোই আধুনিক পরিকাঠামোর পাশাপাশি মাদ্রিদ তার অনেক রাস্তা আর পাড়ার মধ্যে অতীত ইতিহাস বিছিয়ে রেখেছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘প্লাজা মেয়র’ এবং ‘রয়্যাল প্যালেস অফ মাদ্রিদ’-এর মতো অভিজ্ঞান। মাদ্রিদের ‘ফিরহাদ হাকিম’ হলেন হোসে লুইজ় মার্তিনেজ় আলমেইদা। ১৯৯৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মাদ্রিদ শহরে সবুজ বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এখন গোটা শহরের ৮.২ শতাংশ সবুজ। এমনিতে স্পেনের নাগরিকদের শিক্ষালাভ করতে কোনও অর্থব্যয় হয় না। ছয় থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত নাগরিকদের শিক্ষালাভ অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে লা লিগার যে মহাকর্তা তেভাজ়ের বৈঠক, তিনি চরিত্র হিসেবেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এবং খানিক বিতর্কিতও। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে দিল্লিতে এসেছিলেন তেভাজ়। লা লিগার দিল্লির দফতর উদ্বোধন করতে। কেন দিল্লিতে লা লিগার দফতর, তা-ও বলেছিলেন, ‘‘শুধু ইউরোপের বাজার ধরে লা লিগা বাঁচতে পারবে না। আমাদের ভারতেরও বাজার ধরা দরকার।’’

ভারতের দর্শককে আকর্ষণ করতেই ২০১৭ সালের ‘এল ক্লাসিকো’র সময় নির্বাচন করেছিলেন লা লিগার প্রেসিডেন্ট। স্পেনে তখন দুপুর ১টা। ঠা-ঠা গরম! প্রবল সমালোচনা হয়েছিল তেভাজ়ের। তিনি পাত্তা দেননি। বলেছিলেন, ‘‘এশিয়ার বাজারটা ধরা দরকার। আর এশিয়ার মধ্যে ভারত ফুটবলের অন্যতম বাজার।’’ বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সাম্প্রতিক বিতর্ক হল স্পেনের ফুটবলকর্তার মহিলা ফুটবলারকে চুমু খাওয়া নিয়ে। যে বিতর্কের চোটে বিশ্বকাপ জিতেও স্পেনের মহিলা ফুটবল দল কোনও আনুষ্ঠানিক ‘সেলিব্রেশন’ও করতে পারেনি। কাপজয়ের উচ্ছ্বাস চাপা পড়ে গিয়েছিল চুম্বন বিতর্কে। সেই বিতর্ক নিয়েও খানিক চাপে রয়েছেন লা লিগার মহাকর্তা তেভাজ়।

বয়স ৬১ বছর। হাতঘড়িটা পরেন ডান হাতের কব্জিতে। সামান্য ভারী চেহারা। মাথায় কদমছাঁট চুল। ক্লিন শেভন। স্যুটেই বেশি স্বচ্ছন্দ। যেমন বিদেশের ফুটবল প্রশাসকেরা হয়ে থাকেন। স্পেনের জারাগোজ়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় মেয়াদের জন্য লা লিগার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ঘোষিত ভাবে স্পেনের দক্ষিণপন্থী দল ‘স্প্যানিশ ভক্স পার্টি’র সমর্থক। রিয়েল মাদ্রিদের ফ্যান। যদিও তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে তিনি সেই ভক্তি দেখান না। তিনি লা লিগার প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিয়েল মাদ্রিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নন। বস্তুত, রিয়েল মাদ্রিদের সমর্থকেরা বলেন, তেভাজ় বরং রিয়েল মাদ্রিদের প্রতি অযথা অকরুণ। যদিও বার্সেলোনার সমর্থকেরা উল্টো কথা বলেন। তাঁরা বলেন, কারণে-অকারণে তেভাজ় বার্সাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন।

ফুটবল প্রশাসক হিসেবে তেভাজ় মোট ১১টি লা লিগা ক্লাবের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাচ গড়াপেটার বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং টিকিটের দাম দর্শকদের সাধ্যের মধ্যে এনেছেন। বলা হয়, তেভাজ়ের আমলে লা লিগায় বৈপ্লবিক সমস্ত পরিবর্তন এসেছে। যেমন, ক্লাবগুলোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, লা লিগার সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংস্কার, টেলিভিশন স্বত্বের ভূমিকা নির্ধারণ, ম্যাচ গড়াপেটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, স্টেডিয়ামে দাঙ্গাকারীদের মোকাবিলায় নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন এবং সমর্থকদের সঙ্গে ক্লাবগুলির সরাসরি যোগাযোগের জন্য ডিজিটাল এবং মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন।

স্পেনের ফুটবল মহলে বলা হয়, তেভাজ় লা লিগার দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরের মধ্যে লা লিগার ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। রাজস্ব আদায় বেড়েছিল ৪৮ শতাংশ। যদিও অধুনা তেভাজ় লা লিগা নিয়ে চিন্তিত। কারণ, ‘চরিত্র’ নেই, ফলে দর্শক আকর্ষণ কমছে। অনেকেই মনে করছেন, ফুটবল প্রশাসক হিসেবে খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েছেন তেভাজ়।

এই আবহেই তিনি আসছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠকে। যে বৈঠক দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সফর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন