পুরুলিয়ার আন্দোলনে জয়, পাহাড় কেটে পাথর নয়

জিতল পাহাড় বাঁচানোর আন্দোলনই। পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের ধনারডি গ্রামের পাহাড় কাটা হবে না বলে আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

ধনারডির এই সেই পাহাড়। প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

জিতল পাহাড় বাঁচানোর আন্দোলনই। পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের ধনারডি গ্রামের পাহাড় কাটা হবে না বলে আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকালে নবান্নে কাশীপুরের পাহাড় বাঁচাও কমিটির পাঁচ কর্মকর্তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠক হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে তাঁরা সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন কমিটির অন্যতম দুই কর্মকর্তা জয়ধন মান্ডি ও কমলাকান্ত হাঁসদা। শুক্রবার তাঁরা বলেন, ‘‘আলোচনায় আমরা খুশি। কারণ, আমাদের মূল দাবি ছিল, কোনও অবস্থাতেই পাহাড় নষ্ট করা চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পাহাড় কাটা হবে না।”

তবে, কাশীপুরে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ট ট্রেডিং কর্পোরেশনের (এমডিটিসি) মূল প্রকল্পটি স্থগিত হচ্ছে না। পাহাড় বাঁচিয়েই পাথর কাটার কাজ কী ভাবে করা হবে, তার রূপরেখা ঠিক করতে শিল্পমন্ত্রীকে এমডিটিসি-র চেয়ারম্যান এবং কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফের বসার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী সোমবার শিল্পমন্ত্রীর দফতরে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে এমডিটিসি-র প্রকল্পে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কর্মসংস্থান কিংবা এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি নিয়েও কথা হবে।

Advertisement

কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েতের পলসড়া মৌজায় ধনারডি গ্রামে ঢোকার ঠিক মুখে ৩-৫ একর জমির উপরে রয়েছে ওই পাহাড়। এমডিটিসি-র কাছ থেকে বরাত পেয়ে পাহাড় কেটে স্টোনচিপস তৈরির কাজ শুরু করেছিল কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু, স্থানীয় ধনারডি, মুরলু, রাঙ্গুনিগোড়া, পলসড়া, পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ পাহাড় রক্ষার ডাক দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাতে সামিল হয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, পাহাড়ের জঙ্গলের উপরে জ্বালানি-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল তাঁদের পরিবার। পাহাড় ধ্বংস হলে জীবিকায় টান পড়বে। তা ছাড়া, পাহাড় কাটার ফলে নীচের ধানজমি ধুলোয় ভরে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে। পাহাড় বাঁচাও কমিটির আন্দোলনে প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় এমডিটিসি। পুরুলিয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের পাহাড় বাঁচানোর পণ অনেককে ওড়িশার নিয়মগিরি পাহাড় ঘিরে একই ধরনের আন্দোলনের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে।

এই আন্দোলনের খবর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছনোয় তিনি বৃহস্পতিবার আলোচনার জন্য কমিটির কর্মকর্তাদের নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাতে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, পুরুলিয়ার বিধায়ক কেপি সিংহদেও, মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু, সম্প্রতি দলের তরফে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া বাঁকুড়ার ছাতনার বিধায়ক সুভাশিস বটব্যাল এবং এমডিটিসি-র চেয়ারম্যান অম্লান বসু। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর কথায়, ‘‘কাশীপুরের পাহাড় বাঁচাও কমিটির লোকজনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সদর্থক আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন।’’

সূত্রের খবর, নবান্নে আলোচনায় মমতা কমিটির কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন তাঁরা পাহাড় কাটার কাজে বিরোধিতা করছেন। জয়ধন, কমলাকান্তরা বলেন, ‘‘তাঁকে আমরা জানিয়েছি, পাহাড়ের উপরে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার অনেকটাই নির্ভরশীল। তা ছাড়া, আস্ত একটা পাহাড় নষ্ট হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।” তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁরা এমডিটিসি-র প্রকল্পের বিরোধী নন। কিন্তু পাহাড় কেটে পাথর বের করায় তাঁদের আপত্তি রয়েছে। কমিটির মাথাদের আরও দাবি, ‘‘ওই অঞ্চলে এমডিটিসি অন্যান কয়েকটি পাহাড় কাটার লিজ পেয়েছে.মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করেছি এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওই লিজ বাতিল করা হোক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement