Mamata Banerjee

ভিড়, আবেগে অমিত শাহকে টেক্কা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০ ডিসেম্বের বোলপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো-এর ‘পাল্টা’ মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবারের ‘ঐতিহাসিক পদযাত্রা’ কেমন হয়, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল সব মহলেই।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

বোলপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০৬
Share:

পায়ে পায়ে: বোলপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথসভা। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই

ব্যবধান ঠিক ন’দিনের। ২০ তারিখ ছিল ‘রোড-শো’। ২৯ তারিখ ‘ঐতিহাসিক পদযাত্রা’। কিন্তু, ধারে, ভারে এবং স্বতঃস্ফূর্ততায় ২০-কে ছাপিয়ে গেল ২৯। অমিত শাহকে আক্ষরিক অর্থেই টেক্কা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement

২০ ডিসেম্বের বোলপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো-এর ‘পাল্টা’ মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবারের ‘ঐতিহাসিক পদযাত্রা’ কেমন হয়, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল সব মহলেই। শাসক শিবিরের লক্ষ্য ছিল, ভিড় ও আয়োজনের নিরিখে বিজেপি-কে ছাপিয়ে যাওয়া এবং অবশ্যই বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা।

রবীন্দ্র-আবেগ সামনে রেখে সেই কাজে একশো শতাংশ সফল তৃণমূল। বোলপুরের বাসিন্দারা বলছেন, এ দিনের পদযাত্রা রাজনৈতিক কর্মসূচির থেকে অনেক বেশি ছিল সংস্কৃতিক মিছিল। মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় আড়াই লক্ষ লোকের সমাগম করার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, তাতে পুরোটা না-হলেও লক্ষাধিক মানুষের ভিড় এ দিন হয়েছিল।

Advertisement

প্রথমে ঠিক ছিল অমিতের রোড শো-এর পথ ধরে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠ থেকে বোলপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত হাঁটবেন মমতা। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বোলপুর ট্যুরিস্ট লজের মোড় থেকে চৌরাস্তা হয়ে, শান্তিনিকেতন শ্রীনিকেতন রোড ধরে পদযাত্রা শেষ হবে প্রায় সাড়ে তিন কিমি দূরে জামবুনি বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখবেন। নির্দিষ্ট সূচি মেনেই পদযাত্রা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পদযাত্রা শুরু করেন বেলা ১টা নাগাদ।

তার আগেই জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে কর্মী-সমর্থকেরা ডাকবাংলো মাঠে জামায়েত হতে শুরু করেন। আসে আদিবাসী নৃত্যের দল, ঢাক, প্রচুর সংখ্যায় বাউল কীর্তনের দল। ছিল মহিলা ব্যান্ড পার্টি। গোটা রাস্তা সাজানো হয়েছিল সবুজ, সাদা, গেরুয়া বেলুনে। ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকা। রাস্তার দু’দিকে ব্যারিকেডের এক পাশে রবীন্দ্রনাথের বিশাল বিশাল কাটআউট। তার উপরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের লাইন। রাস্তার আর এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডলের ছবি সংবলিত কাটআউট। পদযাত্রা লাইভ দেখানোর জন্য রাস্তার কিছুটা দূরে দূরে ছিল জায়ান্ট স্ক্রিন।

বর্নাঢ্য পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে থেকেই রাস্তার দু’দিকে, বাড়ির ছাদে কাতারে কাতারে লোক জমে গিয়ছিল। মমতা লজ মোড় থেকে ডাকবাংলো মোড়ে পৌঁছে যাওয়ার পরেই তাঁর পিছু পিছু হাঁটতে থাকেন অপেক্ষায় থাকা মানুষজন। অমিত শাহের রোড শো- ঘনঘন উঠেছিল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। কিন্তু, এ দিন কোনও পাল্টা স্লোগান তোলা হয়নি। বরং শঙ্খ ধ্বনি ও উলুর আওয়াজে মুখরিত হয়েছে চারপাশ। ছিল লোকসংস্কৃতির প্রদর্শন। বাউল-কীর্তনের সঙ্গে ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত। পদযাত্রা জুড়ে সামনে ছিল শান্তিনিকেতনী পোশাকে মহিলাদের ৮-১০ জনের দল। তাঁরা একটি লরিতে বসে সমানে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে গিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহার করে অমিতের রোড শো-এর আগে যে ফ্লেক্স পড়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক বেধেছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় রবীন্দ্রনাথের ছবিতে কোথাও অনুব্রত বা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার হয়নি। বরং ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা’, ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’, ‘সভ্যতা সংস্কৃতির দ্বারে আমি যেন ফিরে আসি বারে বারে’ অথবা ‘আমার সোনার বাংলা... ’—কবিগুরুর ছবির উপরে এমন সব গানের কলি ব্যবহার করে কোথায় যেন গেরুয়া শিবিরকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তারা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

পদযাত্রার অনেকটা সময় মমতার হাতে ছিল রবীন্দ্রনাথের একটি ছবিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন