Mamata Banerjee

কথায় কথা বাড়ছে! নতুন করে মুখপাত্রদের তালিকা তৈরির নির্দেশ মমতার, যৌথ দায়িত্বে বক্সী-অভিষেক

বুধবারের বৈঠকে মমতা নেতাদের মুখে লাগাম টানার কথা বলেছেন। বলেছেন, যত্রতত্র বিবৃতি দেওয়া চলবে না। অভিষেক ও বক্সীকে নির্দেশ দিয়েছেন, দলের মুখপাত্র কারা, নতুন তালিকা তৈরি করতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৩
Share:

বুধবারের বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

কথার পিঠে কথা হচ্ছে। তা গড়াচ্ছে বিবৃতিযুদ্ধে। গত ১০ দিনে তৃণমূলের অন্দরে যখন নেতাদের কথা কাটাকাটি প্রায় রুটিনে পরিণত হয়েছে, তখন সাংগঠনিক বৈঠকে কড়া বার্তা দিলেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে ডেকেছিলেন মমতা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানেই মমতা নেতাদের মুখে লাগাম টানার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে মুখ খুললে সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দরকার হলে ছেঁটে ফেলা হবে! সেই সঙ্গে অভিষেক ও বক্সীকে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, দলের মুখপাত্র কারা হবেন, নতুন করে সেই তালিকা তৈরি করতে।

Advertisement

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘দিদি বলেছেন, সবাই মুখপাত্র হয়ে উঠছেন! এটা করা যাবে না। যেখানে সেখানে, যাকে-তাকে যা খুশি বলা যাবে না। দল যাকে মুখপাত্র করবে, সে-ই দলের কথা বলবে।’’ শুধু তা-ই নয়। মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের একটি অংশ যে সামাজিক মাধ্যমে যে ভাবে অন্য অংশের বিরুদ্ধে ‘বিষোদ্গার’ করছে, সেই বিষয়টিও তিনি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। দলের মধ্যে উপদল তৈরির প্রবণতা থেকে যে ভাবে হোয়াট্স অ্যাপ গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, তা-ও অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ওই নেতার কথায়, ‘‘নেত্রী বলেছেন, অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করছে। নিজেদের মতো করে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের মতো চলছে। এটা আর করা যাবে না। দলে থাকলে দলের নীতি মেনে চলতে হবে।’’ মমতা বৈঠকে আরও জানিয়েছেন, তৃণমূলে গণতন্ত্র আছে। ফলে যা বলার দলের অভ্যন্তরেই বলতে হবে। সংবাদমাধ্যমে তা বলা যাবে না। দলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘দিদি বলেছেন, দলের বাইরে কথা না বলে দলের ভিতরে অনেক জায়গা আছে। সেখানে নিজের কথা বলুন!’’ বস্তুত, মমতা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, কারও কিছু বলার থাকলে তিনি দলের রাজ্য সভাপতি বক্সী, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বা মমতার দফতরে তা জানাতে পারেন।

১ জানুয়ারি, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে দলের বিভিন্ন নেতা প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। তা নিয়ে দলকেই ‘অস্বস্তি’তে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন মমতা। সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি যে তা বরদাস্ত করবেন না, বুধবারের বৈঠকে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে যে ভাবে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরে যেমন খুশি বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল, তাতে ‘রুষ্ট’ মমতা। সে কারণেই তিনি নিজে ‘রাশ’ টেনে ধরতে চেয়েছেন। পাশাপাশিই, দলের মুখপাত্রদের মধ্যেও একটা ‘ভারসাম্য’ রক্ষার চেষ্টা করেছেন। সে কারণেই বক্সী এবং অভিষেক— দু’জনকেই মুখপাত্র বাছার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের একাংশ যার মধ্যে প্রবীণ-নবীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রবীণ-নবীনকে একই সঙ্গে কাজ করতে বলার ‘বার্তা’ দেখছেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, শেষ যে তৃণমূলের মুখপাত্রদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে মোট ২৪ জনের নাম ছিল। কিন্তু ওই ২৪ জনের দুই-তৃতীয়াংশ ভাল করে কথা বলতে পারছেন না বলে দলেরই অন্দরে বিভিন্ন স্তরে অনুযোগ ছিল। সেই কারণেই মমতার এই বদল কি না, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে। তবে বেশিরভাগই মনে করছেন, ক্রমাগত বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতিতে দলের মধ্যে যে ‘অস্থিরতা’ এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছে, সর্বময় নেত্রী মমতা সেটা রুখতে চেয়েছেন।

সম্প্রতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম তাপস রায় বা কুণাল ঘোষের বিবৃতির লড়াই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। কখনও আবার তাতে জড়িয়ে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সবাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। সাংসদ সৌগত রায় পাল্টা সুরে তাল ঠোকাঠুকি করেছেন। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের উদয়ন গুহ, রবীন্দ্রনাথ ঘোষেরাও নেমে পড়ছেন বাগ্‌যুদ্ধে। সেই প্রেক্ষাপটে মুখপাত্রদের নতুন তালিকা করার নির্দেশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

ঘটনাচক্রে, এখন তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে যাঁদের দেখা যায় বা কথা শোনা যায়, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ বলে দলশ্রুতি। পাশাপাশিই, যাঁদের বেশির ভাগই ‘নবীন’ গোষ্ঠীভুক্ত।। নতুন তালিকা করার জন্য নেত্রীর নির্দেশের পর তাই পুরনো তালিকার অনেকের মধ্যে উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছে। শাসকদলের কেউ কেউ আবার বলছেন, তালিকায় ‘ভারসাম্য’ আনতে ওই নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন মমতা। পুরনো তালিকায় থাকা এক ‘ঠোঁটকাটা’ মুখপাত্র খানিক লঘু সুরে অবশ্য বলেছেন, ‘‘কাদের মুখে দল কুলুপ আঁটতে চাইছে, তা বোঝা যাবে তখনই, যখন নতুন তালিকা প্রকাশ হবে। যত ক্ষণ সেটা না হচ্ছে, তত ক্ষণ বলতে বাধা নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন