নমস্কার: চ্যাংরাবান্ধায় সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দার্জিলিং রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী নিত্যসত্যানন্দ (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: সন্দীপ পাল
আঁচ আগে থেকেই ছিল। প্রকাশ্য সভায়, ছিটমহল বিনিময় থেকে উন্নয়নের কৃতিত্ব নিয়েছেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকে, ছিটমহলের কাজে স্বচ্ছতা আনার উপরেই জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায় প্রশাসনিক বৈঠকে ছিটমহলের কাজ নিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহাকে ঘন ঘন সাবেক ছিটমহল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন তিনি। প্রয়োজনে ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করতেও নির্দেশ দেন। তিনি জেলাশাসককে বলেন, “সাবেক ছিটমহলে মাঝে মধ্যেই যান। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলুন। কোথাও কোনও গ্যাপ রয়েছে কি না জানুন।” জেলাশাসক সে ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে দেন।
মেখলিগঞ্জ মহকুমাতেই চ্যাংরাবান্ধা। তার কাছে সাবেক ছিটমহল সেটেলমেন্ট ক্যাম্প রয়েছে। হলদিবাড়িতেও একটি সেটেলমেন্ট ক্যাম্প রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক সাবেক ছিটমহল রয়েছে ওই মহকুমায়। এই সাবেক ছিটমহলের অস্থায়ী শিবির তৈরি থেকে স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য জমি কেনাতেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, সাবেক ছিটমহলে রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে পানীয় জলের প্রকল্প সবনিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। মেখলিনগঞ্জে সাবেক ছিটমহলের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য যে জমি কেনা হয়েছে তাতে প্রায় এক কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সাবেক ছিটমহলেরত এই অভিযোগ নিয়ে কি অবস্থান নেন সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন বাসিন্দারা। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এ দিন প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “৬০ বছরে ছিটমহলের বাসিন্দাদের কথা কেউ ভাবেনি। আমরা আসার পরে এই বিনিময় চুক্তি হয়েছে। দুই বাংলার সংহতির সেতুবন্ধন করেছি। দুই পাশের বাসিন্দারাই উপকৃত হয়েছেন। আমরা ওই বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, রেশন থেকে শুরু করে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছি। কিছু কাজ বাকি আছে। তা শীঘ্রই হবে।” সেই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন, যারা কোনওদিন ওই মানুষদের কথা ভাবেননি তাঁরা এখন বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছেন। নাম না করে তিনি বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। এর পরেই তিনি প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুর দিকেই সাবেক ছিটমহলের উন্নয়নের টাকায় তিস্তা নদীর উপরে নির্মীয়মাণ জয়ী সেতুর কি অবস্থা তা জানতে চান। রাজ্যের পূর্ত সচিব অর্ণব রায় মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ওই সেতুর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বর্ষার পরে কাজে গতি আসবে। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
পরে তিনি সাবেক ছিটমহলের কাজের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান জেলাশাসক কৌশিক সাহার কাছে। জেলাশাসক জানান, বরাদ্দ টাকার প্রায় সবটাই কাজ হয়েছে। জমি সমস্যার জন্য দিনহাটায় একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ ৩৫ শতাংশ হয়েছে। জমি সমস্যার কথা তিনি জানালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দ্রুত জমি সমস্যার সমাধান করে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করুন।” সেই সঙ্গে তিনি অন্যান্য কাজের কোথাও কোনও খামতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেন। বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, “সদিচ্ছা থাকলে সাবেক ছিটমহলে সঠিক উন্নয়ন করুন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকায় আখেরে কোনও কাজ হচ্ছে না। দুর্নীতি হচ্ছে।”