আসছেন মমতা, সঙ্গে অনুব্রতও

মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যে কেউই আসতে পারেন। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই, উপরন্তু লোকসভা ভোটের আগে জেলায় দলের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। তার উপরে আবার অনুব্রতকে আনা হচ্ছে কেন? প্রশ্নটা ঘুরছে দলেরই অন্দরে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৬
Share:

রানাঘাট ছাতিমতলা মাঠে হচ্ছে হেলিপ্যাড। ডান দিকে, কৃষ্ণনগরে সারছে ত্রিফলা আলো। নিজস্ব চিত্র

আসছেন দলনেত্রী। সঙ্গে বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল। জেলা তৃণমূল সূত্রেই মিলছে এই খবর।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যে কেউই আসতে পারেন। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই, উপরন্তু লোকসভা ভোটের আগে জেলায় দলের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। তার উপরে আবার অনুব্রতকে আনা হচ্ছে কেন? প্রশ্নটা ঘুরছে দলেরই অন্দরে।

আগামী ৯ জানুয়ারি দুপুর দেড়টা থেকে রানাঘাটে হবিবপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে সোজা আসবেন কৃষ্ণনগরে সার্কিট হাউসে। বেলা ৩টে থেকে সেখানে দলের অঞ্চল সভাপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেখানেই উপস্থিত থাকার কথা অনুব্রতের। রবিবার দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের মুখে জেলাসফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী কল্পতরু হয়ে উঠতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেকে।

Advertisement

এ দিনের বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের তরফে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে কেউ যেন নেত্রীর কাছে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করেন। দলের বৈঠকের আগে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, এ বার কোন-কোন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন হতে পারে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৯টির মতো প্রকল্পের শিলান্যাস ও প্রায় ৬০টির উদ্বোধন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস যেমন হতে পারে, তেমনই শিলান্যাস হতে পারে তেহট্টের স্টেডিয়ামেরও। কৃষ্ণনগরের আইটি হাব-এর উদ্বোধন হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। কারণ তালিকা তৈরির কাজ এখনও চলছে। তাঁর বিধানসভা এলাকায় তেমন কোনও প্রকল্প নেই বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন পলাশিপাড়ার বিধায়ক তাপস সাহা।

মুকুল রায়ের পরে নদিয়ার পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থকে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের পরে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুকে। অনেকেই মনে করছেন, এই জেলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত থামাতেই শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির অপেক্ষাকৃত ভাল ফলের পরে তৃণমূলের চিন্তা আরও বেড়েছে। বিজেপি জেলার দুটো আসনকেই, বিশেষত কৃষ্ণনগর কেন্দ্রকে নিশানা করেছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, একাধিক সর্বভারতীয় ‘হেভিওয়েট’ নেতৃত্ব তো বটেই, খোদ নরেন্দ্র মোদীও কৃষ্ণনগরে আসতে পারেন।

এই পরিস্থিতে বিজেপির উপরে চাপ বাড়াতে দলের আরও নেতাদের শামিল করার মধ্যে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অনুব্রত কেন? দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত শুধু বলেন, “দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে কে আসবেন তা নিয়ে মন্তব্য করার মতো এক্তিয়ার আমার নেই।”

তবে জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, তার একটা কারণ চড়া দাগের বক্তৃতা করার ব্যাপারে অনুব্রতর ‘খ্যাতি’। লোকসভা ভোটের আগে এই জেলায় নেতা-কর্মীদের ‘ভোকাল টনিক’ দিতেই নেত্রী তাঁকে সঙ্গে আনছেন বলে মনে করছেন কেউ-কেউ। তা ছাড়া, নদিয়ার মতোই অনুব্রতের নিজের জেলা বীরভূমেও বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। ফলে নদিয়া জেলার নেতাকর্মীদের সামনে তিনি সরাসরি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই কথা বলতে পারবেন।

ভোটের পরে ‘চ়ড়াম চ়়ড়াম’ করে ঢাক বাজানোর কথা বলে এক সময়ে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন অনুব্রত। নদিয়ায় এত দিন সে সবের প্রয়োজন না থাকলেও, এ বার অবস্থা যে একটু অন্য রকম তা সকলেই মানছেন। তৃণমূলের এক বিধায়কের কথায়, “বিজেপিকে কী ভাবে আটকাতে হয়, তা অনেকের চেয়ে ভাল জানে কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল)। এখানে তিনি গুড়-বাতাসার দাওয়াই দিয়ে যান কি না, সেটাই দেখার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন