হাসিন জাহান। —ফাইল চিত্র।
এক সপ্তাহ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে নিজের সমস্যা জানানোর চেষ্টা করছিলেন ভারতীয় পেসার মহম্মদ শামি-র স্ত্রী হাসিন জাহান।
গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রচারমাধ্যমের মারফত আবেদন করার পরে, সোমবার আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েই হাসিন চলে গিয়েছিলেন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। জমা দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আবেদনপত্র।
সেই আবেদন জমা পড়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেই হাসিন বুধবার প্রচারমাধ্যমকে জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাতের জন্য শুক্রবার তাঁকে সময় দিয়েছেন। হাসিন এবং তাঁর আইনজীবী জাকির হুসেনের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু কোথায় দেখা করবেন, তা এখনও জানতে পারিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা জানা যাবে।’’
আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার ভোট রয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় থাকবেন। সে-ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যদি হাসিন জাহানের সঙ্গে দেখা করেন, তা হলে সেটা হতে পারে রাজ্যসভার ভোটপর্ব মেটার পরেই।
এরই মধ্যে হাসিনের আইনজীবী জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ ও সুপ্রিম কোর্টে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। যদিও কে বা কারা হাসিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, সেই ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁদের ইঙ্গিত মহম্মদ শামি এবং তাঁর পরিবারের দিকেই।
এ দিকে, শামি ও হাসিনের পারিবারিক ঝামেলায় এ বার হাজির হয়েছে নতুন চমক। করাচির আলিশবা-র পরে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিলেন হাসিনের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ‘মহম্মদ ভাই’। সেই সাক্ষাৎকারে মহম্মদ ভাই বলে দিলেন, ‘‘শামি-হাসিনকে চিনলেও আলিশবা নামে কোনও পাকিস্তানি মহিলাকে চিনি না। ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গেও আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
শামির বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও তাঁর দাদা-সহ গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে খুন ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন হাসিন। এর সঙ্গেই শামির স্ত্রী প্রচারমাধ্যমকে শুনিয়েছিলেন একটি রেকর্ড করা ফোন-কল। যেখানে শামিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, দুবাইয়ে মহম্মদ ভাইয়ের পাঠানো অর্থ আলিশবা-র কাছ থেকে নিতে গিয়েছিলেন তিনি।
এ বার টিভি-র সামনে হাজির হয়ে ইংল্যান্ড থেকে মহম্মদ ভাই বলে দিলেন, তাঁর পুরো নাম মহম্মদ হনসলত। তাঁর কথায়, ‘‘সুরাতে বড় হয়েছি। ইংল্যান্ডে আছি ২৫ বছর ধরে। মোবাইল ফোনের ছোটখাটো ব্যবসা করি। ভারতীয় ক্রিকেটদলের ইংল্যান্ড সফরের সময়ে হাসিন ও শামির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবেই আলাপ। এর বাইরে আর কিছুই নয়। হাসিন আমাকে ভাই বলে ডাকত।’’
এর সঙ্গে মহম্মদ ভাই যোগ করেন, ‘‘আলিশবা নামে কাউকে আমি চিনি না। কোনও দিন পাকিস্তানেও যাইনি। কারও সঙ্গে টাকা লেনদেনের প্রশ্নও নেই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার লোকেরা ইংল্যান্ডে এলে আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসব। নার্কো অ্যানালিসিস-সহ যে-কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি আছি।’’
এরপরেই আবেগপ্রবণ হয়ে মহম্মদ ভাই বলেন, ‘‘তদন্ত হোক। আমার শরীরে ভারতীয় রক্ত রয়েছে। প্রাণ থাকতে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে ভারতীয় ক্রিকেট বা তেরঙ্গা পতাকাকে কলুষিত হতে দেব না।’’
এরই মধ্যে এ দিন লালবাজারে গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘দুবাইয়ের যে-হোটেলে শামি ছিলেন, তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ-সহ আরও কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’’