প্রাক্তনকে নিয়ে ‘প্রাক্তনদের’ হুঁশিয়ারি মমতার

মাওবাদীদের জন্য রাজ্যের তৈরি করা আত্মসমর্পণের নীতিকে কিছুটা এড়িয়েই সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়া মাওবাদীদের অনেককেই একটা সময় হোমগার্ড পদে নিযুক্ত করেছিলেন ভারতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

বৈঠক: আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলমহলের মাওবাদীদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোয় সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুলিশ সুপার সেই ভারতী ঘোষ নিজেই এখন আর নেই সরকারি স্রোতে। তবুও জঙ্গলমহল, বিশেষ করে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের উপর ভারতীর ‘অদৃশ্য প্রভাব’ নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় নবান্ন। মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে প্রায় সাড়ে তিনশো জন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের ফলে এই জল্পনা আরও তীব্র হল প্রশাসনের অন্দরে।

Advertisement

কারণ, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এখন যারা পুলিশে আছে তারা যেটা বলবে, তা শুনবে। কিন্তু যারা আগে ছিল এখন নেই, তারা যদি কোনও কথা বলে তা শুনবে না। এটা মাথায় রেখে বুদ্ধি করে চলতে হবে। পুলিশ সহযোগিতা করবে। মজবুত নেটওয়ার্ক তৈরি করো।’’ সভায় সুচিত্রা মাহাত, জাগরী বাস্কে, জয়ন্ত হেমব্রমের মতো প্রাক্তন মাওবাদীরাও ছিলেন।

মাওবাদীদের জন্য রাজ্যের তৈরি করা আত্মসমর্পণের নীতিকে কিছুটা এড়িয়েই সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়া মাওবাদীদের অনেককেই একটা সময় হোমগার্ড পদে নিযুক্ত করেছিলেন ভারতী। যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা ছিল। সরকারের ‘মুখ’ হিসাবে পূর্ণ ভরসা এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি করিয়েছিলেন বলেই ভারতীর উপর প্রাক্তন মাওবাদীদের ‘আস্থা’ এখনও থেকে যেতে পারে বলে মনে করছে নবান্ন। ঘটনাচক্রে, এ দিন যে আত্মসমর্পণকারীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই হোমগার্ড পদে কর্মরত বলে জানাচ্ছে প্রশাসনের একাংশ। প্রশাসনিক কর্তারা দেখছেন, ভারতী এক দিকে বিভিন্ন অডিও বার্তায় জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য তাঁর কাজকর্মের কথা মনে করাচ্ছেন, অন্য দিকে তাঁর ‘প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে বিজেপির মতো বিরোধীরা ওই এলাকায় তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি ঠেকাতে ঝাঁপাবে পঞ্চায়েত

বিজেপিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে গোলমাল বাধানোর চেষ্টা হয়। হিন্দু-মুসলমান, শিখ-খ্রিস্টান, আদিবাসী-তফসিলদের মধ্যে গোলমাল লাগানোর চেষ্টা যাতে না করতে পারে সে দিকে নজর রাখতে হবে তোমাদের।
ওরা চায়, ঝাড়খণ্ড যে হেতু অশান্ত রয়েছে, তাই জঙ্গলমহল যাতে অশান্ত হয়ে যায়।’’ আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের এ দিন কড়া নিরাপত্তায় আনা হয় নবান্নে। নদিয়া থেকে ফিরেই সরাসরি সভাঘরে পৌঁছে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভাঘরের চারপাশে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

‘জঙ্গলমহল সমন্বয় সভা’ শীর্ষক ওই বৈঠকে সাড়ে ছ’বছরে সরকারের সাফল্যও তুলে ধরেন মমতা। সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁর সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা উল্লেখ করেন। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’-সহ একাধিক সামাজিক প্রকল্পের উদাহরণ দেন। বিভিন্ন ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ কী ভাবে সরকার দিচ্ছে, তা-ও সকলকে বোঝান মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন