পশ্চিম বর্ধমানে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সভা, প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যসচিব।

সমস্যার হাল বেরোবে কি, অপেক্ষা

এই পরিস্থিতিতে জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা জানান, কাঁকসায় সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও নতুন প্রকল্প বা পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা জানিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন কি না, সে দিকেই তাঁরা তাকিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০০
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসেও ভয় কাটল না। ফাইল ছবি।

জেলা ভাগের পরে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক। জেলা তৈরির পরে নানা পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে বলে আশা রয়েছে এলাকাবাসীর। তাঁদের দাবি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমান তৈরির আট মাস পরে বেশ কিছু বিষয়ে আগামী দিনে আরও নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা।

Advertisement

অবৈধ বালি-কয়লা

Advertisement

কাঁকসায় অজয় ও দামোদর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা চলছে বলে অভিযোগ। এর ফলে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে বালিঘাটের বরাত পাওয়া বৈধ বালি ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন। উল্টো দিকে, কয়লার অবৈধ খননের জেরে অনেক সময়েই ধস নামছে নানা এলাকায়। বিপন্ন হচ্ছে জনজীবন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই দুই ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনকে মাঝেসাঝে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেলও তা যথেষ্ট নয়।

প্রসঙ্গ পুনর্বাসন

রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি, সালানপুরের একাধিক এলাকা ধস কবলিত। ওই এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে ২০০৯-এ কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ২৬২৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে। কিন্তু পুনর্বাসনের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে আবাসন তৈরির দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য সরকার। সরকার ঘোষণা করে, প্রায় ৪৫ হাজার বাড়ি তৈরি করা হবে। কিন্তু সেই কাজ এখনও বিশবাঁও জলে। তবে জেলা প্রশাসন জানায়, জামুড়িয়ার বিজয়নগরে ৪২ ও বারাবনির দাসকেয়ারিতে ১৩ একর জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত মিটুক, চাইছেন বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন: পদ্ম কাটতে পার্থ চান ধারালো কাস্তে হাতুড়ি

দফতর চেয়ে

নতুন জেলা তৈরি হলেও এ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই জেলা দফতর তৈরি হয়নি। আবার কোথাও জেলা দফতর তৈরি হলেও সর্বক্ষণের আধিকারিক, কর্মী নিয়োগ হয়নি। কোথাও আবার কর্তা থাকলেও, সব কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যেমন, স্কুল শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের পেনশন সংক্রান্ত কাজ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বেশ কিছু কাজের জন্য এখনও ভরসা বর্ধমান। জেলা সামাজকল্যাণ দফতরে আধিকারিক থাকলেও কর্মী নেই। জেলা পরিষদের জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসক নিয়োগ হয়নি।

পরিবহণ সমস্যা

এই ক্ষেত্রে জেলার সবথেকে বড় সমস্যা অটো-টোটো, অটো-বাস বিবাদ। বিবাদের জেরে প্রায়শই বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া দুর্গাপুরে রাতে বাস মেলে না বলে অভিযোগ।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রের দাবি

তৈরি হওয়ার পরে থেকেই সালানপুরের ১১টি ও বারাবনির ১০টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ পড়ে। বাসিন্দাদের দাবি, আসানসোল জেলা হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার ও মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি হাসাপাতাল দ্রুত চালু করা হোক। কাঁকসার তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা বেহাল বলে অভিযোগ। কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে জলের অভাব। এ ছাড়া সম্প্রতি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত উধাও হয়ে যায়। ফলে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে বৃদ্ধ বা হিরাপুরে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনা হোক বা বিধাননগর, আসানসোলে একের পরে এক চুরি হয়েছে। এর ফলে সামগ্রিক ভাবে জেলায় পুলিশি সক্রিয়তা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

ব্যারাজ নিয়ে

সম্প্রতি দুর্গাপুর ব্যারাজের এক নম্বর লকগেট বিকল হয়ে নাকাল হতে হয় দুর্গাপুর ও লাগোয়া এলাকার মানুষজনকে। সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভরসায় বসে না থেকে নিজেরাই ব্যারাজ সংস্কারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তের কথা জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যসচিব কিছু বলেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে আছেন এলাকাবাসীর অনেকেই।

আর্জি কাঁকসাতেও

কাঁকসা ব্লকের কাঁকসা, বামুনাড়া-সহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হয় কয়েক বছর আগে। কিন্তু এখনও সেগুলি চালু হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল এলাকা থেকে দূরত্বের কারণে এই কমপ্লেক্সগুলিতে যেতে চাইছেন না ব্যবসায়ী বা ক্রেতা, কেউই। কাঁকসা ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতে একশোরও বেশি গ্রামের পড়ুয়াদের উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটতে হয় দুর্গাপুর, মানকর, গলসি, বোলপুর বা বর্ধমানে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডিগ্রি কলেজ তৈরির জন্য জায়গা দেখা, তহবিল তৈরি ইত্যাদি হলেও কলেজ এখনও তৈরি হয়নি।নেই মাদ্রাসাও।

এই পরিস্থিতিতে জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা জানান, কাঁকসায় সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও নতুন প্রকল্প বা পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা জানিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন কি না, সে দিকেই তাঁরা তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন