নেতাদের ‘গাফিলতি’, বৈঠকে তোপ মমতার

শুক্রবার তৃণমূল ভবনের দলের পর্যালোচনা বৈঠকে মমতার সামনে ওন্দা ব্লকের একের পর এক পঞ্চায়েতের দলীয় নির্বাচিত সদস্যেরা বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০০:২০
Share:

—ফাইল চিত্র।

উন্নয়ন করেও বাঁকুড়ায় পরাজয়ের জন্য দলের কিছু জেলা নেতাকে দুষলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তিনি কয়েকজন জেলা তৃণমূল নেতাকে উদ্দেশ করে বলেন, তাঁদের জন্যই দলের ফল খারাপ হয়েছে। প্রাক্তন সভাপতি অরূপ খাঁ এবং প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকেও সংগঠনের কাজে মন দিতে বলেন।

Advertisement

শুক্রবার তৃণমূল ভবনের দলের পর্যালোচনা বৈঠকে মমতার সামনে ওন্দা ব্লকের একের পর এক পঞ্চায়েতের দলীয় নির্বাচিত সদস্যেরা বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। সদ্য প্রাক্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁয়ের নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দলের এমন পরিণতি কেন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল জেলার বিভিন্ন মহলেই।

দল সূত্রের খবর, শ্যামলবাবু নেত্রীকে জানান, ওন্দায় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তা শুনে অরূপবাবুর উপর মমতা চটে গিয়ে তাঁকে ভৎর্সনা করেন বলে খবর। জেলার এক তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “নেত্রী জানিয়েছেন, তিনি বাঁকুড়া জেলায় কম উন্নয়নমূলক কাজ করেননি।

Advertisement

অথচ তার পরেও দলের এমন শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য সাংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের গাফিলতিকেই এ দিন দায়ী করেছেন দলনেত্রী। ওন্দার পরিস্থিতি নিয়েও তিনি অসন্তুষ্ট হন। অরূপবাবুকে এ জন্য ধমক দিয়েছেন তিনি।”

বৈঠক শেষে অরূপবাবু দাবি করেন, “ওন্দার পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। আমাদের দলের কোনও ভাল নেতা বা কর্মী বিজেপিতে যাননি। দিদি আমাকে আরও মন দিয়ে কাজ করতে বলেছেন।” শ্যামলবাবু বলেন, “দলের সমস্যা অভ্যন্তরীণ বৈঠকে দলনেত্রীকে বলেছি। বাইরে মন্তব্য করব না।”

লোকসভা ভোটের পর থেকেই ওন্দায় তৃণমূলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওন্দা ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় কোথাও বিরোধী প্রার্থী না থাকায় পূর্ণাঙ্গ ভোট হয়নি। যে কয়েকটি আসনে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে কিছু আসন বিজেপি পেয়েছিল এই ব্লকে। সব ক’টি পঞ্চায়েতই ছিল তৃণমূলের দখলে। লোকসভা ভোটের পরে কয়েকটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান-সহ সদস্যেরা বিজেপিতে যোগদান করছেন।

ইতিমধ্যেই ওন্দা ব্লকের নাকাইজুড়ি, কাঁটাবাড়ি ও কল্যাণী গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ সদস্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই পঞ্চায়েতগুলিতে ক্ষমতা হারানোর মুখে রাজ্যের শাসক দল। এ ছাড়াও চূড়ামণিপুর, রতনপুর-সহ কয়েকটি পঞ্চায়েতের কয়েকজন তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে যোগদান করেছেন।

লোকসভা ভোটের পরে ওন্দায় তৃণমূলের কয়েকটি পার্টি অফিস বন্ধ হয়েছিল। অনেক তৃণমূল কর্মী ঘরছাড়া হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে, অরূপবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পার্টি অফিসগুলি খোলা হচ্ছে। সংগঠনের কাজকর্মও শুরু হয়েছে। ওন্দায় একাধিক তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়েছেন মানুষজন। সব মিলিয়ে ওন্দা নিয়ে নেতৃত্ব খুব একটা স্বস্তিতে নেই।

কিছু দিন আগে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দলীয় নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন উপপুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়াল। সূত্রের খবর, দিলীপবাবুকে ফের কাজে যোগ দিতে বলেছেন মমতা। প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য ধমকও খেয়েছেন তিনি। দিলীপবাবু বলেন, “দলনেত্রীর নির্দেশে আমি ফের কাজে যোগ দেব।”

সূত্রের খবর, পুরপ্রধানকে বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপার সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার নির্দেশ দেন মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন