Mahua Moitra Mamata Banerjee

‘ওদের পরিকল্পনা মহুয়াকে তাড়ানো’, এই প্রথম নাম করে সাংসদের পাশে নেত্রী মমতা, বার্তা গেল দলেও

মহুয়াকে নিয়ে যখন বিতর্কের সূত্রপাত হয়, সেই সময়ে দলগত ভাবে তৃণমূল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। কুণাল ঘোষ থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েনরা সরাসরি বলেছিলেন, এটা মহুয়ার নিজের লড়াই। এই লড়াই তাঁকেই লড়তে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৩
Share:

(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। তখন থেকে কার্যত নীরবই ছিল তৃণমূল। অবশেষে কৃষ্ণনগরের সাংসদের নাম করে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের সাংগঠনিক সভার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘এদের (বিজেপির) প্ল্যান এখন মহুয়াকে তাড়ানো! তিন মাস আর বাকি আছে (সংসদের মেয়াদ শেষ হতে)। মহুয়া যেগুলো ভিতরে বলত, এ বার সেগুলোই বাইরে বলবে। মূর্খ না হলে ভোটের তিন মাস আগে কেউ এই কাজ করে!’’

Advertisement

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রশ্নেই মহুয়া আদানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভার এথিক্স কমিটি বিরুদ্ধে তদন্ত করে। তার পরে কমিটি স্পিকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে, মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করা হোক। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই তা উত্থাপিত হতে পারে লোকসভায়। সংখ্যাধিক্যের জোরে ওই প্রস্তাব পাশও হয়ে যাবে লোকসভায়। অর্থাৎ, মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, মহুয়াকে নিয়ে যখন বিতর্কের সূত্রপাত, সেই সময়ে দলগত ভাবে তৃণমূল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। কুণাল ঘোষ থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েনরা বলেছিলেন, এটা মহুয়ার নিজের লড়াই। এই লড়াই তাঁকেই লড়তে হবে। ডেরেক এ-ও বলেছিলেন, এথিক্স কমিটি সিদ্ধান্ত নে‌ওয়ার পর দল যা বলার বলবে। এর মধ্যে সপ্তাহ দেড়েক আগে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হয়। সেখানে দেখা যায়, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার অব্যবহিত আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে প্রকারান্তরে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, মহুয়ার ওই লড়াই করার পক্ষে একাই যথেষ্ট। তার পরেই মহুয়াকে সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়। যাতে মহুয়া নিজেও সন্তুষ্ট হন। কারণ, ওই নিয়োগে তাঁর প্রতি দলের ‘ইতিবাচক’ বার্তাই ছিল। বৃহস্পতিবার দলীয় নেতৃত্বের সামনে স্বয়ং মমতা নাম করে মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোয় তা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছে তৃণমূলের অন্দরমহল।

Advertisement

মহুয়া প্রশ্ন তুলেছিলেন আদানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ‘সখ্য’ নিয়ে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মমতা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে ঘোষণা করেন, তাজপুর সমুদ্র বন্দরের জন্য নতুন করে যে কোনও সংস্থা দরপত্র জমা দিতে পারে। গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকারই জানিয়েছিল, তাজপুরে সমুদ্র বন্দর নির্মাণে জোড়া দরপত্র জমা পড়েছিল। তা থেকে বরাত পেয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। মঙ্গলবার মমতা যে ভাবে নতুন করে দরপত্র দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আদানির সঙ্গে নবান্নের দূরত্ব রচিত হয়ে গেল। অনেকেই যাকে পরোক্ষে ‘মহুয়ার জয়’ বলেই অভিহিত করেছিলেন। এ বার দলীয় বৈঠকে ‘প্রত্যক্ষ’ ভাবেই মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে দিলেন মমতা।

তৃণমূল নেতাদের একটি অংশ ঘরোয়া আলোচনায় এমনও বলছেন যে, নদিয়া জেলায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল বহু পুরনো। ভরা নেতাজি ইন্ডোরে মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে মমতা নদিয়ার নেতাদেরও বোঝাতে চাইলেন, সাংসদ ও জেলা সভাপতি সম্পর্কে দলের অবস্থান কী। যা মহুয়ার পক্ষেই যাবে।

অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আদানির ‘সখ্য’, ব্যবসা ‘পাইয়ে দেওয়া’ ইত্যাদি নিয়ে সংসদে যাঁরা চাঁচাছোলা প্রশ্ন তুলেছেন, সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তেমনই রয়েছেন মহুয়াও। সেই প্রেক্ষাপটে মহুয়ার পাশে তৃণমূলের সরাসরি না-দাঁড়ানো নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী পরিসরেও ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছিল। বাংলায় মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরীরা মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তৃণমূল কেন তাদের সাংসদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বৃহস্পতিবার মমতা সেই ধোঁয়াশাও কাটিয়ে দিলেন। তৃণমূলের একাংশের মতে, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আদানিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বার্তা দেওয়ায় মহুয়া রাজনীতির বৃত্তে এক কদম এগিয়ে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দলনেত্রীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি আরও কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement