মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটার তালিকায় বাদ পড়লে নাম তুলতে এগিয়ে যেতে হবে মহিলাদের, বলতে হবে, “তোলো নাম। শিগগির তোলো!”
রাজ্যে ২০২১-এর বিধানসভা, ’২৩-এর পঞ্চায়েত, ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আবহে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ‘বহিরাগত’ আটকাতে যা বলেছিলেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগেও সেই একই দাওয়াই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে (এসআইআর) ‘বিজেপির বদমায়েশি’ বলে চিহ্নিত করে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বীরসিংহপুরে দলীয় সভা থেকে বলেছেন, “যদি পাড়া-প্রতিবেশী কারও নাম কাটে, ঘরের মা-বোনেরা ভাইদের নিয়ে যাবেন। মায়েরা সামনে থাকবেন, গিয়ে বলবেন, নাম তোলো, শিগগির নাম তোলো।” নাম বাদ গেলে বিজেপি নেতাদের ‘জয়নগরের নাড়ু’ খাওয়ানো হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি!
প্রাথমিক ভাবে এসআইআর-এর সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন মমতা। পরে তাঁর প্রশাসন সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও এই এসআইআর-এর উদ্দেশ্য নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। সেই সূত্রেই মমতা এ দিন ফের বলেছেন, “খসড়া তালিকায় নাম থাকলেই চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকবে, তার ‘গ্যারান্টি’ নেই। লক্ষ্য রাখতে হবে। ভোট সামনে বলে হ্যাংলাবাবু তাড়াতাড়ি করছেন! ওঁদের জিততে হবে। জিতবে না, কচু হবে! ঘেঁচু পাবে!” ইআরও-দের বাদ দিয়ে দিল্লিতে বসে বিজেপির এক জন নাম বাদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “যে ৫৮ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে, তাঁরা আবার আবেদন করবেন।”
এসআইআর-এর প্রথম পর্বে খসড়া তালিকায় রাজ্যে প্রায় ৫৮ লক্ষ ১৯ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, তার মধ্যে স্থানান্তরিত এবং অনুপস্থিত ভোটারের সংখ্যা ৩২ লক্ষ ৬৫ হাজার। বিবাহ সূত্রে ঠিকানা বদল হয়েছে, এমন অনেক মহিলার নাম বাদ গিয়েছে বলে আগে অভিযোগ করেছেন মমতা। খসড়া তালিকায় বাদ পড়া মহিলাদের বড় অংশকে যথাযথ ফর্ম পূরণ করিয়ে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল। বড়জোড়ায় মহিলাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের আহ্বানে সেই ইঙ্গিতই রয়েছে বলে শাসক শিবির সূত্রের ব্যাখ্যা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাশাপাশি মমতা এ দিন ফের নিশানা করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমি এক জন ভ্যানিশ কুমারের কথা বলছি। নিজের পরিবার গোছানোর জন্য বিজেপির দালালি!” দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “একটা ন্যায্য লোকের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। আর যদি দেন, আন্দোলন দিল্লিতে হবে, বাংলাতেও হবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য সফরের দিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এখন শান্তিতে ঘুরে যাচ্ছেন, এর পরে নির্বাচন করতে আসবেন না? তখন বাংলার নাড়ু খাবেন। সঙ্গে মহিলারা ঘর পরিষ্কার করেন কী দিয়ে? নাড়ুর সঙ্গে মিলিয়ে, মা শীতলার হাতে থাকে! বলতে পারছেন না!”
এই পরিস্থিতিতে এ দিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কলকাতায় ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের কাছে ফের দরবার করেছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। কমিশনের কাছে রাজ্যের তিন মন্ত্রী শশী পাঁজা, পুলক রায়, বিরবাহা হাঁসদা এবং সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বাপি হালদারেরা পড়াশোনা বা কর্মসূত্রে বাইরে থাকা লোকজনের জন্য ভার্চুয়াল শুনানি, অসুস্থ ও বিশেষ ভাবে সক্ষমদের বাড়ি গিয়ে শুনানি, প্রবীণদের বাড়িতে গিয়ে শুনানির সময়-বৃদ্ধি, তথ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে যাঁদের (লজ়িক্যাল ডিসক্রিপেন্সি), সেই তালিকা প্রকাশ-সহ নানা দাবি ফের তুলেছেন। পার্থের সংযোজন, “দীর্ঘ দিন এলাকায় থাকা লোকজন, যাঁরা ভোটও দিয়েছেন, অথচ যাঁদের নির্দিষ্ট কাগজ নেই, তাঁদেরও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হোক।”
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে